সমুদ্র পথ থেকে বিমান যাত্রা: হজ কাফেলার বিবর্তন
প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে শরতের একদিনে মুঘল শাহজাদী গুলবদন বেগম প্রথমবারের মতো হজ পালনের জন্য পবিত্র মক্কা ও মদিনার দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে হজে যাওয়ার ইতিহাস তখন থেকেই শুরু। গুলবদন বেগম, সম্রাট বাবরের কন্যা, ভারতে মুগল সাম্রাজ্যের প্রথম নারী হিসেবে হজ পালন করেছিলেন। তার বয়স তখন ৫৪ বছর। সমুদ্র পথ থেকে বিমান, বাংলাদেশের হজ যাত্রা
সমুদ্র পথ থেকে বিমান, বাংলাদেশের হজ যাত্রা
বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে হজে যাত্রার ইতিহাস সুলতানি আমল থেকে শুরু হয়। ১২০৪ সালে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূত্রপাতের পর থেকেই হজে যাত্রা শুরু হয়। সুলতানি আমলে পালতোলা জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হজ যাত্রী পরিবহনের ইতিহাস রয়েছে।
ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, লেখক ও দানবীর খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ হজ পালন করতে যান। তার লেখা বইতে সমুদ্র পথে হজ যাত্রার বিবরণ পাওয়া যায়। করাচি বন্দর থেকে জাহাজে করে হজে যাত্রা করার সময় যাত্রীদের নিজেদের রান্না করে খেতে হতো এবং উত্তাল সমুদ্রের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সহ্য করতে হতো।
সমুদ্রপথে যাত্রার কষ্ট | সমুদ্র পথ থেকে বিমান, বাংলাদেশের হজ যাত্রা
খান বাহাদুর আহছানউল্লাহর লেখা ‘আমার জীবন-ধারা’ বইতে সমুদ্র পথে হজ যাত্রার অভিজ্ঞতা ফুটে উঠেছে। উত্তাল তরঙ্গে জাহাজ টলমল করতো এবং যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিতে হতো। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হজে যাওয়ার ইতিহাস পরবর্তীকালে আরো বিকশিত হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হজ যাত্রা
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সরকারিভাবে হজ যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। পূর্ব পাকিস্তানের হাজীরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হজে যেতেন। কিছু সচ্ছল হাজী করাচি থেকে বিমানে করে হজে যেতেন। তখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুইটি ট্রিপে হাজী পরিবহন করা হতো।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর হজ যাত্রার পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়। সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় বাংলাদেশিরা ভারতের পাসপোর্টে হজে যেতেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ‘হিজবুল বাহার’ নামে একটি জাহাজ ক্রয় করে হজ যাত্রা সহজতর করে। সমুদ্র পথ থেকে বিমান, বাংলাদেশের হজ যাত্রা
শেখ মুজিব ও বাদশাহ ফয়সালের বৈঠক
১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সৌদি বাদশাহ ফয়সালের কাছে বাংলাদেশের মুসলমানদের হজ পালনের অনুমতি চেয়ে একটি তারবার্তা পাঠান। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে শেখ মুজিব ও বাদশাহ ফয়সালের মধ্যে বৈঠক হয়। এই বৈঠক সফল না হলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশিরা হজ পালনের অনুমতি পান।
সমুদ্র পথ থেকে বিমান, বাংলাদেশের হজ যাত্রা
সময় ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে হজ যাত্রার পদ্ধতি বদলে যায়। সমুদ্র পথের দীর্ঘ ও কষ্টকর যাত্রা থেকে বিমান যাত্রার সহজ ও দ্রুত পদ্ধতিতে পরিবর্তন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার হাজী বিমানে করে পবিত্র হজ পালন করতে মক্কা ও মদিনায় যাত্রা করেন। এই বিবর্তন বাংলাদেশের হজ যাত্রার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
সমুদ্র পথ থেকে বিমান যাত্রা: হজ কাফেলার বিবর্তন দেশের হজ যাত্রীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। এই পরিবর্তন দেশের মানুষের হজ যাত্রা সহজ ও নিরাপদ করেছে।
আরও পড়ুন
চার দশকে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকাল মৃত্যু
প্যারাসেইলিং কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে