আকিল হোসেইন: সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প
আকিল হোসেইন, একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার, যিনি ত্রিনিদাদের ল্যাভেনটাইল থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। তার সংগ্রামের গল্প, ক্রিকেটের প্রতি তার অবিচল নিষ্ঠা, এবং তার সম্প্রতিক সাফল্য ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস। ‘স্বর্গের’ উল্টো দিক থেকে উঠে আসা আকিল
ল্যাভেনটাইলের কঠিন জীবন
ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ল্যাভেনটাইল শহরটি একটি অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। আকিল হোসেইন এই কঠিন এলাকা থেকেই উঠে এসেছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন। ত্রিনিদাদ দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একদিন আকিল একটি ভয়েস নোট পাঠান—অনুশীলনে আসতে পারবেন না। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেননি, কিন্তু তার ভয়েস নোটেই পরিষ্কার শোনা যাচ্ছিল গুলির আওয়াজ। এই পরিস্থিতি তার দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ ছিল।
ক্রিকেটের প্রতি নিষ্ঠা
ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ক্রিকেটের ‘স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত। ডোয়াইন ব্রাভো, কাইরন পোলার্ড, সুনীল নারাইন, স্যামুয়েল বদ্রির মতো টি-টোয়েন্টি তারকাদের জন্মস্থান এই ত্রিনিদাদ। আকিলও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এই স্বর্গ থেকে উঠে এসেছেন। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন আকিল, এরপর ২০১৪ সাল থেকে খেলছেন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএলে)।
জাতীয় দলে অভিষেক
আকিলের জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে ২০২১ সালে। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার বাংলাদেশ সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন, তখন আকিলের ডাক পড়ে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ‘সামনে যদি তারা আমাকে বাদ দিতে চায়, তাহলে কাজটি অনেক কঠিন করে তুলব’। তিনি নিজের সংকল্প পূরণ করেন। অভিষেকের পর থেকে সাদা বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আকিলের চেয়ে বেশি উইকেট পাননি আর কেউ।
আন্তর্জাতিক সাফল্য
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আকিলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরিচিতি এনে দেয়। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ২ ম্যাচে তার অর্জন ৭ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৬ উইকেট! পাপুয়া নিউগিনি ও উগান্ডার বিপক্ষে তার এই পারফরম্যান্স অন্যান্য দলগুলোর জন্যও একটি সতর্কবার্তা।
ড্রিফট ও কৌশল
আকিল হোসেইন নিজের অন্যতম শক্তি হিসেবে ‘ড্রিফট’কে মনে করেন। তবে সময়ের সাথে সাথে, কন্ডিশন বিবেচনায় নিজেকে বদলানোর কোনো বিকল্প দেখেন না তিনি। স্পিনার হয়ে পাওয়ারপ্লেতে বোলিংয়ের কঠিন কাজটি করেন তিনি, যা প্রতিপক্ষের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
ল্যাভেনটাইল থেকে উঠে আসা
আকিলের সংগ্রামের গল্পটি ল্যাভেনটাইলের অন্যান্য শিশুদের জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘যেখান থেকে উঠে এসেছি, কিসের মধ্য দিয়ে গেছি; এরপর বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্ব করা, নিজেদের দর্শকের সামনে এমন পারফরম্যান্স—অবশ্যই আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার।’
সুনীল নারাইনকে আদর্শ
আকিল হোসেইন সুনীল নারাইনকে আদর্শ মানেন। তিনি মনে করেন, ক্রিকেটে তার সাফল্যের পেছনে সুনীল নারাইনের অনেক অবদান রয়েছে। আকিলের কথায়, ‘সুনীল ভাই আমাকে সব সময়ই উৎসাহ দেন এবং কৌশলগত পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ আমাকে মাঠে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দিতে সাহায্য করে।’
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
আকিল হোসেইন ক্রিকেটে আরও বড় সাফল্য অর্জনের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বিশ্বাস করেন, তার সংগ্রামের গল্প নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা হবে। আকিলের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আরও অনেক ম্যাচ জেতা এবং বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে নিজেকে প্রমাণ করা।
আকিল হোসেইনের জীবন কাহিনী একটি সত্যিকারের সংগ্রাম এবং সাফল্যের গল্প। ত্রিনিদাদের ল্যাভেনটাইল থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অবস্থান তৈরি করা সহজ ছিল না। তবে তার ক্রিকেটের প্রতি নিষ্ঠা, সংকল্প এবং কষ্ট সহিষ্ণুতা তাকে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। আকিল হোসেইনের গল্প প্রতিটি ক্রিকেট প্রেমীর জন্য একটি প্রেরণার উৎস।