মিয়ানমারের সঙ্গে গায়ে পড়ে যুদ্ধ বাধানোর ইচ্ছা নেই: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে এবং সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে গায়ে পড়ে যুদ্ধ বাধানোর কোনো ইচ্ছা পোষণ করে না। এই মন্তব্য তিনি আজ রোববার রাজধানী ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে করেন।
মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা
সম্প্রতি টেকনাফ-সেন্ট মাটিন নৌপথে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে নৌযান লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেছেন, “মিয়ানমারের মতো একটা দেশকেও কিছু বলা যাবে না? এটা যে কতটা নতজানু, দাসসুলভ মনোভাব হতে পারে! সীমান্তে মানুষ মারছে, পানি দিচ্ছে না, অথচ সরকার একটা কথা বলে না।”
সরকারের প্রজ্ঞা ও কৌশল
ওবায়দুল কাদের জবাবে বলেন, “মির্জা ফখরুল দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েছেন। কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও কৌশলের বাইরে গিয়ে এমন কথা বলেছেন যা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের ন্যূনতম ধারণা নেই। সরকার আক্রান্ত হলে পাল্টা আক্রমণে প্রস্তুত আছে। ইতিমধ্যে সেখান থেকে যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাহার হয়েছে এবং যান চলাচল নিয়মিত হয়েছে। আমরা গায়ে পড়ে ঝগড়া করব না।”
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান
কাদের আরও বলেন, “মির্জা ফখরুলকে বলতে চাই, এখানে উসকানি দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ বাধাব? সারা বিশ্ব রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। যেকোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় সরকার। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আলাপ-আলোচনার দরজা খোলা আছে। শেখ হাসিনা জানেন কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। কোরাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন দখল হয়ে যাচ্ছে—এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিএনপি-জামায়াত এসব গুজব ছড়াচ্ছে।”
সীমান্তের কঠোর নজরদারি
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, “বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনীসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা সতর্ক আছে। সেন্ট মার্টিন সীমান্তে গোলাগুলি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আমরা সতর্ক আছি। সেন্ট মার্টিনে গুলিটা আরাকানরা করেছে, মিয়ানমার সরকার করেনি।”
নতুন রাষ্ট্র গঠনের ইন্ধন?
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সেখানে নতুন রাষ্ট্র গঠনে প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা অমূলক নয়। আরও কিছু থাকতে পারে কি না, খতিয়ে দেখব এবং খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে আলোচনা করতে পারি। তাদের অভ্যন্তরীণ সংকটে আমাদের এখানে উসকানি কেন? আলোচনার দরজা খোলা। তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ আছে।”
রোহিঙ্গা সমস্যা ও বিএনপির দায়
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ওপর বোঝা হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রথম বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়েছিল বিএনপি সরকার। রোহিঙ্গারা বোঝা হয়ে আছে, তাদের ফিরে যেতেই হবে। সে প্রয়াস অব্যাহত আছে। আমরা নতজানু আচরণ কখনো করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।”
বিএনপির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চা
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, “বিএনপির আন্দোলনের ব্যর্থতার মূল দায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। তিনি লন্ডনে বসে কাউকে পদায়ন ও কাউকে বাদ দিচ্ছেন। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চায় বিএনপি কতটা উদাসীন ও অনীহ, আজ সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে।”
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ
মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
আরও পড়ুন..