ফুটপাতের খাবারে ডায়রিয়ার জীবাণু : স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রতিরোধ
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ফুটপাতের খাবার বেশ জনপ্রিয় হলেও, সেগুলি স্বাস্থ্যঝুঁকির উৎস হতে পারে। ফুটপাতের দোকানগুলোতে দূষিত পানি, নোংরা গামছা, এবং খোলা নোংরা পরিবেশে অপরিষ্কার হাতে খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন করা হয়। এতে খাবার অস্বাস্থ্যকর ও মারাত্মক সব জীবাণুতে পূর্ণ থাকে। সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এক গবেষণায় ফুটপাতের জনপ্রিয় ৬ ধরনের খাবারে উচ্চমাত্রার ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে। এসব খাবার খেলে ডায়রিয়াসহ হতে পারে নানা রোগ। ফুটপাতের খাবারে ডায়রিয়ার জীবাণু
জনপ্রিয় ৬ ধরনের খাবার ও জীবাণুর উপস্থিতি
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের গবেষণায় ছোলামুড়ি-চটপটি, স্যান্ডউইচ, আখের রস, অ্যালোভেরা জুস, এবং মিক্সড সালাদে উচ্চমাত্রার ই-কোলাই, ভিবরিও এসপিপি ও সালমোনেলার মতো মারাত্মক সব ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ সায়েন্সের প্রধান বিজ্ঞানী মো. লুতফুল কবীর জানান, এসব ব্যাকটেরিয়া মানুষের পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে বড় রকমের ডায়রিয়ার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
গবেষণা পদ্ধতি ও ফলাফল
রাজধানীর রাস্তায় বিক্রি হওয়া ছয় ধরনের খাবারের ৪৫০টি স্যাম্পলের ওপর ভিত্তি করে এ গবেষণা করা হয়েছে। যারা রাস্তার পাশে খাবার বিক্রি করেন তাদের পানি দূষিত, হাত অপরিষ্কার, গামছা নোংরা এবং আশপাশের পরিবেশ ধুলাবালিতে পরিপূর্ণ। এমন অবস্থায় খুব সহজেই এসব জীবাণু খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তাদের আক্রান্ত করছে।
রোগ প্রতিরোধের করণীয়
ডায়রিয়া এবং অন্যান্য পানিবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে ফুটপাতের খাবার বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিক্রেতাদের সঠিক লাইসেন্সের আওতায় আনতে হবে এবং স্ট্রিট ফুড বিক্রেতাদের আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘প্রতি জেলায় কী পরিমাণ ফুড লাইসেন্স আছে এবং এই লাইসেন্সের আওতার বাইরে কারা খাবার বিক্রি করছেন, সেটি যাচাইয়ের আওতায় আনতে হবে। যারা ভেজাল ও দূষিত খাবার বিক্রি করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ফুটপাতের খাবারের স্বাস্থ্যঝুঁকি: বিস্তারিত বিশ্লেষণ
ফুটপাতের খাবারগুলি জনপ্রিয় হলেও, সেগুলির স্বাস্থ্যঝুঁকি অবহেলা করা যায় না। খাদ্য প্রস্তুতি ও পরিবেশনার সময় যে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না, তা খাবারের গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না। নিচে কয়েকটি প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
দূষিত পানি ব্যবহার
ফুটপাতের খাবারে ব্যবহৃত পানি সাধারণত মানহীন এবং দূষিত। এই পানি খাবারের সাথে মিশে মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। পানির মান নিশ্চিত করতে বিক্রেতাদের নিরাপদ পানির উৎস ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
অপরিষ্কার হাত ও সরঞ্জাম
বিক্রেতাদের হাত এবং খাদ্য প্রস্তুতির সরঞ্জামগুলো অপরিষ্কার থাকায় খাবারে জীবাণু প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে। এর প্রতিরোধে বিক্রেতাদের হাত ধোয়ার সঠিক পদ্ধতি শেখানো এবং পরিষ্কার সরঞ্জাম ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।
পরিবেশের ধুলাবালি ও দূষণ
ফুটপাতের খাবারের দোকানগুলো সাধারণত খোলা পরিবেশে থাকে, যেখানে ধুলাবালি ও দূষণের মাত্রা বেশি। এ থেকে বাঁচার জন্য খাবার বিক্রির স্থানগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং সম্ভব হলে খাবার ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
আইনগত কাঠামো ও লাইসেন্সিং
ফুটপাতের খাবার বিক্রেতাদের সঠিক লাইসেন্স প্রদান এবং আইনি কাঠামোর আওতায় আনার মাধ্যমে তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা যাবে। এতে তাদের মানসম্পন্ন এবং নিরাপদ খাবার বিক্রির প্রবণতা বাড়বে।
উপসংহার
ফুটপাতের খাবারে ডায়রিয়ার জীবাণুর উপস্থিতি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ, লাইসেন্সিং, এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ফুটপাতের খাবারের মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।
এভাবে দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফুটপাতের খাবারগুলির স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে, যা দেশের জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আরও পড়ুন..