রাসেল ভাইপার বিশ্বের দ্বিতীয় বিষধর সাপ। কিন্তু কতটা সত্যি এই দাবি?
বাংলাদেশ জুড়ে বর্তমানে রাসেল ভাইপার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে, রাসেল ভাইপার বিশ্বের দ্বিতীয় বিষধর সাপ। অনেকেই বলছেন, এই সাপ মানুষের দিকে তেড়ে এসে কামড় বসিয়ে দেয়। কিন্তু কতটা সত্যি এই দাবি? আসলেই কি রাসেল ভাইপার বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপের তালিকায় দুই নম্বরে রয়েছে? এই প্রতিবেদনে আমরা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখব এবং বিশ্বে সবচেয়ে বিষধর সাপগুলোর তালিকা তুলে ধরব। রাসেল ভাইপার বিশ্বের দ্বিতীয় বিষধর সাপ। কিন্তু কতটা সত্যি এই দাবি?
রাসেল ভাইপারের বাস্তবতা
রাসেল ভাইপার মূলত মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়ার ভারত, চীন এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বেশি দেখা যায়। গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশেও এই সাপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। রাসেল ভাইপার খুব দ্রুত রেগে যায় এবং প্রধানত রাতের বেলা শিকারে বের হয়। এরা খুব দ্রুত আক্রমণ করে থাকে এবং এই সাপে কামড়ালে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। পরে শ্বাসকষ্ট, প্যারালাইসিস দেখা দেয় এবং হৃদস্পন্দন আস্তে আস্তে কমে যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে এই সাপের বিষে মৃত্যুও হতে পারে।
তবে, যে দাবি করা হচ্ছে রাসেল ভাইপার বিশ্বের দ্বিতীয় বিষধর সাপ, তা আসলে সঠিক নয়। বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপের তালিকায় রাসেল ভাইপারের অবস্থান কতটা ভয়ংকর তা জানার জন্য আমাদের আসল তথ্যগুলো দেখা দরকার।
বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর ১০টি সাপ
10. র্যাটল স্নেক
যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায় এই সাপ। এরা শরীরের দুই-তৃতীয়াংশ লাফিয়ে আক্রমণ করে। র্যাটল স্নেকের বিষ শরীরের টিস্যু নষ্ট করে ফেলে এবং রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এটি শিশুদের জন্য খুবই বিপজ্জনক এবং শ্বাসকষ্ট, প্যারালাইসিসসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে।
9. ডেথ অ্যাডার
অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায় এই সাপ। এরা অন্যান্য সাপের মতো কামড়ায় এবং বিষ প্রয়োগ করে। ডেথ অ্যাডারের বিষ নার্ভ সিস্টেমকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত করে।
8. ভাইপারস
ভাইপারস সাপের একটি জাত, যার মধ্যে রাসেল ভাইপারও অন্তর্ভুক্ত। এই প্রজাতির সাপের কামড়ালে শ্বাসকষ্ট, প্যারালাইসিস এবং হৃদস্পন্দন কমে যায়।
7. ফিলিপাইন কোবরা
এই সাপ প্রায় তিন মিটার দূর থেকে বিষ ছুড়ে মারতে পারে। কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীর অবশ হয়ে যায় এবং মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে মৃত্যু হয়।
6. টাইগার স্নেক
টাইগার স্নেক কামড়ানোর ৩০ মিনিটের মধ্যে মানুষ মারা যায়। এরা সাধারণত মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়, কিন্তু ক্ষেপে গেলে খুবই ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
5. ব্ল্যাক মামবা
ব্ল্যাক মামবা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। এরা খুব দ্রুতগামী এবং আক্রমণাত্মক। একবার কামড়ালে ২৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
4. টাইপান
অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায় এই সাপ। টাইপানের এক কামড়ে ১২ হাজার গিনিপিগের মৃত্যুর মতো বিষ থাকে। এদের কামড় থেকে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।
3. ব্লু ক্রিট
এই সাপ দক্ষিণ এশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াতে দেখা যায়। ক্রিট প্রজাতির সাপগুলি অন্য সাপ শিকার করে এবং খেয়ে বাঁচে। এদের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং মৃত্যুর হার ৮৫ শতাংশ।
2. ইনল্যান্ড টাইপান
অস্ট্রেলিয়ার ইনল্যান্ড টাইপান বিশ্বের দ্বিতীয় বিষধর সাপ। এক দংশনে শতাধিক পূর্ণবয়স্ক মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। তবে, এরা সাধারণত মানুষের সান্নিধ্যে আসতে চায় না।
1. বেলচারস সী স্নেক
বেলচারস সী স্নেক সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ। এর এক কামড়ে প্রায় এক হাজার পূর্ণবয়স্ক মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তবে, এই সাপটি খুবই শান্ত ও লাজুক প্রকৃতির।
রাসেল ভাইপার নিশ্চয়ই একটি বিষধর সাপ, তবে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বিষধর সাপ নয়। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, রাসেল ভাইপার বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপের তালিকায় শীর্ষস্থানীয় নয়। এটি যেমন ভীতিকর, তেমনই অন্যান্য সাপের মতোই তখনই আক্রমণ করে যখন এদের কেউ আঘাত করে বা ধরতে যায়। তাই রাসেল ভাইপারকে দূর থেকে তেড়ে এসে কামড়ানোর তথ্যটি সত্যি নয়। সবসময় সতর্ক থাকতে হবে, তবে ভীতি ছড়ানো উচিত নয়।
আরো পড়ুন: