মতিউর রহমানের ছাগলকাণ্ড: বিতর্কিত রাজস্ব কর্মকর্তা ও নরসিংদীর চেয়ারম্যানের মুখোমুখি
দেশজুড়ে আলোচিত মতিউর রহমানের ছাগলকাণ্ড নিয়ে এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনা নিয়ে চলমান আলোচনা-সমালোচনা থামছেই না। মতিউর রহমানের এই বিতর্কিত ঘটনায় তার প্রথম স্ত্রী ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকীও পিছিয়ে নেই। এই ঘটনা নিয়ে গত দুই সপ্তাহের অধিক সময় তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
লাকীর উপজেলা পরিষদে প্রত্যাবর্তন
গোটা দেশে যখন মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও ছাগলকাণ্ড নিয়ে উত্তাল, তখনই বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে হঠাৎ উপজেলা পরিষদে হাজির হন লায়লা কানিজ লাকী। তার উপস্থিতি টের পেয়ে উপজেলা পরিষদে ছুটে আসেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকরা। লাকী সেখানে দুটি সভায় যোগ দিলেও, সভাকক্ষে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। সভা শেষে তিনি দ্রুত সেখান থেকে চলে যান এবং সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি।
বিতর্কিত বক্তব্য
উপজেলা পরিষদ ত্যাগ করার আগে লাকীর একটি মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি নাকি বলেছেন, ‘ঢাকার জাতীয় পত্রিকা ও টিভির বড় বড় সাংবাদিকসহ নরসিংদীর সাংবাদিকদের কিনেই নরসিংদীর রায়পুরায় উপজেলা পরিষদে এসেছি, তারা আর কিছুই করতে পারবে না’। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তবে লাকী এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি এবং তাকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
চেয়ারম্যানদের প্রতিক্রিয়া
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী বলেন, “উনি তো রানিং চেয়ারম্যান। মিটিংয়ে আসতেই পারেন। আসার পর তিনি কোনো সাংবাদিকের সাথে কথা বলবেন না, এটাই জানিয়েছিলেন।” এলাহী আরও বলেন, “উনি কি পাগল, উনি প্রফেসর মানুষ। উনি একটা টুঁ শব্দ না করার নিয়ত করেই আসছেন। কারণ শব্দ করলেই বিপদ।”
আগের রাতের বৈঠক
বুধবার (২৬ জুন) রাতে লাকী ভৈরবের একটি রেস্টুরেন্টে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে কী কথা হয়েছিল জানতে চাইলে মঞ্জুর এলাহী বলেন, “উনি পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আমরা ওই পরিষদের সদস্য। উনি আমাদেরকে ডাকতেই পারেন। আমরা সেখানে যাওয়ার পর পরামর্শ করি কী করা যায়।” তিনি আরও বলেন, “সাংবাদিকদের কি বলবেন? উনার সকল নাড়ি-নক্ষত্র এবং উনার স্বামী গোপনে বিয়ে করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি সবই তো প্রকাশ পেয়েছে।”
রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরামের প্রতিক্রিয়া
রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরামের সভাপতি আল আমিন ভূইয়া মাসুদ বলেন, “সাংবাদিক কিনে আসছি” এমন কোনো বক্তব্য শুনিনি বা আমাদের সামনে তিনি বলেননি।
ছাগলকাণ্ডের পেছনের কাহিনী
ঈদুল আজহায় মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১২ লাখ টাকায় ছাগল বুকিং দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। তার আয়ের উৎস অনুসন্ধানে গিয়ে বেরিয়ে আসে মতিউর রহমানের দুর্নীতির কাহিনী। এরপরই মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে তথ্য ফাঁস হতে শুরু করে।
পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক পরিণতি
ছাগলকাণ্ডের পর মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজ লাকীর সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে লাকী আবারো রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।
এই ছাগলকাণ্ড ও দুর্নীতির ঘটনা বাংলাদেশের সুশাসন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মতিউর রহমানের দুর্নীতির চিত্র প্রকাশের পর দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান অনুসন্ধান ও তার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
আরো পড়ুন: