Custom sticker service

Your One-Stop Shop for Personalized Stickers,
Crafted with Love and Delivered Fast! 💌

বুড়িগঙ্গার ট্র্যাজেডি: বিচারপ্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং অপেক্ষার প্রহর

বুড়িগঙ্গার ট্র্যাজেডি: বিচারপ্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং অপেক্ষার প্রহর

চার বছর আগে, ২০২০ সালের ২৯ জুন, মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে যায়। এই দুর্ঘটনায় মর্নিং বার্ডের ৩৪ জন যাত্রী প্রাণ হারান। এ ঘটনার পর নৌ-পুলিশ দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২১ সালে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। কিন্তু, ঘটনার চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার প্রক্রিয়া।

বুড়িগঙ্গার ট্র্যাজেডি

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ শেখ হেলাল উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে এবং আসামিদের সাফাই সাক্ষ্যের জন্য সময় নির্ধারিত হয়েছে। আগামী ৪ জুলাই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছে, আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে, তবে আসামিপক্ষের দাবি, সাক্ষ্যগ্রহণে আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ উঠে আসেনি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার জানান, “এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলা দ্রুত শেষ করতে আমরা প্রথম থেকেই তৎপর ছিলাম। ৪২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি শেষ হয়। আসামিরা এখন নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।”

বিচার বিলম্বের কারণ

বিচার বিলম্বের ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার বলেন, “আসামিপক্ষ মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত করছেন। গত তিনটি তারিখে সাফাই সাক্ষ্য দিতে তারা সময় চেয়েছেন এবং আদালত তাদের সময় মঞ্জুর করেছেন। সময় না দিলে তারা উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। এজন্য আদালত তাদের সময় দিচ্ছেন।”

তিনি আরও জানান, “সাক্ষ্যে উঠে এসেছে যে ময়ূর-২ লঞ্চটি দ্রুত গতিতে ঘাটে যাওয়ার সময় মর্নিং বার্ডকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়েছে। এ কারণে এতগুলো প্রাণ ঝরে গেছে। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, তাদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে।”

অপরদিকে, ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদসহ ৯ জনের আইনজীবী সুলতান নাসের বলেন, “মামলাটি সাক্ষ্য শেষে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিও হয়েছে। এখন আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য চলছে। যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় ঘোষণা করবেন।” তিনি আরও বলেন, “মামলায় ৩৬ জন সাক্ষীর কেউ বলতে পারেননি, কোন লঞ্চ কাকে ধাক্কা দিয়েছে। বড় লঞ্চ ছোট লঞ্চকে ধাক্কা দিয়েছে কেউ বলেনি। তারা শুধু ডুবতে দেখেছেন। সব আসামি সাফাই সাক্ষী দেবে। আশা করছি, আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবো। তারা এ মামলায় খালাস পাবেন।”

ঘটনার বিবরণ

২০২০ সালের ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাটে পৌঁছানোর আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার পরের দিন ৩০ জুন রাতে নৌ-পুলিশের সদরঘাট থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ শামসুল বাদী হয়ে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট নৌ-থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর শহিদুল আলম ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

অভিযোগপত্রের বিবরণ

অভিযোগপত্রে বলা হয়, লঞ্চ মালিক কিছু কমোড ও মালপত্র নামানোর জন্য ময়ূর কোম্পানির ম্যানেজার, সুপারভাইজার, মালিক এবং অন্য কর্মকর্তারা মাস্টার, সুকানি, ড্রাইভার ও গ্রিজারদের নির্দেশ দেন। সেই কারণে ময়ূর-২ লঞ্চের কর্মচারীরা তাড়াহুড়া করে দ্রুত মালপত্র সরবরাহের জন্য বোগদাদিয়া ডকইয়ার্ড ছেড়ে টার্মিনালের দিকে রওনা হয়। এ ছাড়া মাস্টার বা সুকানি হেলপার দিয়ে লঞ্চ চালানো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

বিচার প্রক্রিয়ার অবস্থা

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, লঞ্চ মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ, ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন, সুপারভাইজার আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন এবং সালামরা ময়ূর কোম্পানির সার্বিক পরিচালনাকারী। তাদের ভুল দিকনির্দেশনায় এবং পরিচালনায় ৩৪ নিরীহ মানুষের জীবন চলে যায়। ডুবে যাওয়া লঞ্চের মাস্টার-সুকানিরা বারবার সংকেত দেওয়ার পরও এজহারনামীয় আসামিরা দ্রুত ঘাটে যেতে মর্নিং বার্ডকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে, যার ফলে ধাক্কা লেগে মুহূর্তেই লঞ্চটি তলিয়ে যায়।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে বিভিন্ন কারণেই। তবে এটি শেষ হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলেই অপেক্ষায় আছেন। বিচারপ্রক্রিয়ার সঠিক এবং দ্রুত সমাপ্তি যেন হয়, সে বিষয়টি সকলেরই কাম্য।

আরো পড়ুন:

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ঘরোয়া ওষুধ

নিজস্ব প্রতিনিধি

Related Posts

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা…

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ: নাগরিক কমিটির প্রতিবেদন গতকাল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক কমিটি ও স্বাস্থ্য…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You Missed

একদিনে টাঙ্গাইলের পাঁচ জমিদার বাড়ি ভ্রমণ

একদিনে টাঙ্গাইলের পাঁচ জমিদার বাড়ি ভ্রমণ

১ অক্টোবর থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে

১ অক্টোবর থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত

সোনার দাম বাড়লো

সোনার দাম বাড়লো

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ

হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লার মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি

হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লার মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি