হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লার মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি: ইসরায়েলের দাবি ও হিজবুল্লাহর নীরবতা
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তাল পরিস্থিতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে হিজবুল্লাহর প্রধান সায়্যেদ হাসান নাসরুল্লার মৃত্যুর গুজব। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স-এ (সাবেক টুইটার) নাসরুল্লার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে। তবে এ নিয়ে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি, যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি এবং উদ্বেগ।
ইসরায়েলি দাবির প্রেক্ষাপট
গতকাল (শুক্রবার) লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েল ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি জানিয়েছেন, এই হামলায় লক্ষ্যবস্তু ছিল হিজবুল্লাহর প্রধান সদর দপ্তর, যা বৈরুতের দাহিয়ের একটি বেসামরিক ভবনের নিচে তৈরি করা হয়েছিল। হামলায় ব্যবহৃত হয় ২ হাজার কেজির বাঙ্কার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, যা ছোড়া হয়েছে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান থেকে।
হ্যাগারি দাবি করেন, ইসরায়েলি বাহিনী এই হামলাটি খুবই দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছে এবং এটি ছিল ব্যাপক প্রস্তুতির অংশ। এই হামলার পর থেকেই নাসরুল্লার মৃত্যুর গুজব ছড়াতে শুরু করে। ইসরায়েলি বাহিনীর প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল হারজি হালেভি ভিডিও বার্তায় বলেন, “সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় এই হামলা করা হয়েছে, যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
হিজবুল্লাহর নীরবতা ও বিভ্রান্তি
যদিও ইসরায়েলি বাহিনী নাসরুল্লার মৃত্যু দাবি করেছে, বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং এএফপি হিজবুল্লাহর কয়েকটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে যে, নাসরুল্লা বেঁচে আছেন এবং সুস্থ আছেন। তবে আজ শনিবারের এএফপি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, নাসরুল্লার কাছের একটি সূত্র জানিয়েছে যে গতকাল সন্ধ্যা থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সূত্রটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, তারা নিশ্চিত নয় নাসরুল্লাহ এখনও বেঁচে আছেন কিনা, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ
হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। বিশেষত লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রভাব এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলমান। নাসরুল্লার মৃত্যু বা তার মৃত্যু নিয়ে ছড়ানো গুজব এই সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। একদিকে ইসরায়েলের দাবি, অন্যদিকে হিজবুল্লাহর নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে। নাসরুল্লার মৃত্যু হলে এটি হিজবুল্লাহর ওপর বিশাল আঘাত হিসেবে দেখা হবে, যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, নাসরুল্লা জীবিত আছেন নাকি নিহত হয়েছেন? যদি ইসরায়েলের দাবি সঠিক হয় এবং নাসরুল্লা নিহত হয়ে থাকেন, তাহলে হিজবুল্লাহ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে? লেবাননে হিজবুল্লাহর ভূমিকা এবং ইরানসহ অন্যান্য মিত্রদের সাথে তাদের সম্পর্কের ভিত্তিতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লার অবস্থা নিয়ে সঠিক তথ্য জানা না গেলে এই উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। তার মৃত্যু যদি সত্য হয়, তাহলে এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করার সম্ভাবনা রাখে এবং নতুন সংঘাতের সূচনা ঘটাতে পারে।
আরো পড়ুন
কোটার সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনে সহস্রাধিক নিহত ও চার শতাধিক মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন