ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফুল দিয়ে বরণ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যর্থনা
ভূমিকা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রবর্তক, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার নেতৃত্বে গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক এবং সামাজিক ব্যবসা মডেল বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, ড. ইউনূস দেশে ফিরে এলে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। এই ঘটনা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে থাকবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফুল দিয়ে বরণ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আগমন
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট দুপুর সোয়া ২টার দিকে ফ্রান্সের প্যারিস থেকে এমিরেটসের ফ্লাইট (ইকে-৫৮২) করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার আগমনকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দরে বিশাল আয়োজন করা হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ অন্যান্য সামরিক বাহিনীর প্রধানরা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভূমিক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, এই আন্দোলনের নেতারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করার প্রস্তাব দেন। ড. ইউনূসের দেশে ফেরা উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা তাকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন।
ফুল দিয়ে বরণের আয়োজন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিমানবন্দরে পৌঁছালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। এই উচ্ছ্বাসমুখর আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নেতা এবং দেশের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
বিমানবন্দরের প্রবেশপথে শিক্ষার্থীরা হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ড. ইউনূসকে অভ্যর্থনা জানান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত অনেকেই উল্লাসিতভাবে ড. ইউনূসের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তারা তাদের আদর্শিক নেতা হিসেবে ড. ইউনূসকে স্বাগত জানান এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই ঘোষণার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক উত্তেজনা ও আলোচনা চলছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান যে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শপথ গ্রহণ করবেন এবং ড. ইউনূস সেই সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আগমনে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা ড. ইউনূসের প্রতি তাদের সমর্থন এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে বিমানবন্দরে যান।
ইউনূস সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন এবং ড. ইউনূসকে বরণের জন্য প্রস্তুতি নেন। তারা তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান এবং তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
ড. ইউনূসের বার্তা
বিমানবন্দরে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যারা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যারা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।”
ড. ইউনূসের এই বার্তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং তাদের আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে। তার নেতৃত্বে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে বলে সবাই আশাবাদী।
শিক্ষার্থীদের উদ্দীপনা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। তারা মনে করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে এবং তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য দূর হবে।
শিক্ষার্থীরা তাদের নেতৃত্বে একটি নতুন দিশা প্রদর্শন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা ড. ইউনূসের প্রতি তাদের সমর্থন এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান। এই আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের শক্তি, সাহস এবং সংহতি প্রদর্শন করেছেন, যা দেশের ভবিষ্যত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
উপসংহার
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেশে ফেরা এবং তাকে ফুল দিয়ে বরণ করার মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। এই ঘটনা শুধু তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি নতুন দিশা প্রদর্শন করে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ত্যাগ
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংসদ ভবনে হামলা ও লুটপাট