Custom sticker service

Your One-Stop Shop for Personalized Stickers,
Crafted with Love and Delivered Fast! 💌

ইউনূসহীন গ্রামীণ ব্যাংক কেমন করছে

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ খাতের একটি অনন্য উদাহরণ। তার নেতৃত্বে গ্রামীণ ব্যাংক কেবল দেশের গরিব মানুষের আর্থিক সহায়তার জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হয়নি, বরং এটি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত এবং স্বীকৃত হয়েছে। ড. ইউনূসের অনুপস্থিতিতে ব্যাংকটির কার্যক্রম এবং বর্তমান অবস্থান নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে। এ লেখায় আমরা ইউনূসহীন গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম, অর্জন এবং বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষণ করব। ইউনূসহীন গ্রামীণ ব্যাংক কেমন করছে

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রাথমিক ইতিহাস

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ১৯৮৩ সালে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামের গরিব মানুষের আর্থিক সহায়তা প্রদান। বিশেষ করে যেসব মানুষ সাধারণ ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসতে পারেন না, তাদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা ছিল এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম লক্ষ্য।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে ২৮ বছরে গ্রামীণ ব্যাংক প্রায় ৭০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। তার এই উদ্যোগে গ্রামীণ ব্যাংক দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক একটি আদর্শ মডেল হয়ে ওঠে, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুসরণ করা হয়।

ড. ইউনূসের অনুপস্থিতিতে গ্রামীণ ব্যাংক

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের নেতৃত্ব থেকে সরে যান। এরপর থেকে ব্যাংকটির কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং এটি কতটা সফল, তা নিয়ে নানা বিতর্ক ও আলোচনা হয়েছে। তবে প্রাপ্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউনূসের অনুপস্থিতিতে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে আগের থেকে আরও বেশি সফল হয়েছে।

২০১১ সালের পর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক নতুন নেতৃত্বের অধীনে প্রায় এক লাখ ৫২ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা ড. ইউনূসের সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এই সময়ে ঋণ আদায়ের হার ছিল ৯৯ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা ২০১১ সালে ছিল ৯৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানগুলি থেকে বোঝা যায় যে, ব্যাংকটির কার্যক্রম একটুও কমেনি বরং তা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে।

ঋণ বিতরণ ও আদায়ের হার

গ্রামীণ ব্যাংক ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। ড. ইউনূসের সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বর্তমান সময়ে ব্যাংকটির ঋণ আদায়ের হার প্রায় ৯৯ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা ব্যাংকটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কার্যক্রমের সফলতার প্রমাণ দেয়। এই ঋণ আদায়ের হার প্রমাণ করে যে, ব্যাংকটির গ্রাহকদের মধ্যে অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতা এবং ঋণ পরিশোধের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

সদস্য সংখ্যা ও গৃহঋণ প্রকল্প

গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা ২০১১ সালে ছিল ৮৩ লাখ ৭১ হাজার, যা ২০২০ সালের জুন মাসে এসে দাঁড়িয়েছে ৯৩ লাখ ১৩ হাজারে। এই সদস্যদের মধ্যে নারী সদস্যের হার ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা ড. ইউনূসের সময়ের তুলনায় সামান্য বেশি। এই বৃদ্ধি প্রমাণ করে যে, ব্যাংকটির কার্যক্রম কেবলমাত্র শহরের মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং গ্রামাঞ্চলের নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

গ্রামীণ ব্যাংক ২০১১ সালে ৯০২ কোটি টাকা গৃহঋণ বিতরণ করেছিল, যা ২০২০ সালের জুন মাসে দাঁড়িয়েছে ৯৬ কোটি টাকায়। এই গৃহঋণ প্রকল্পটি গ্রামীণ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সম্প্রসারণ

ড. ইউনূসের সময়ে ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ক্ষুদ্রপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছে। তবে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এক কোটি ১৪ লাখ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করেছে ব্যাংকটি। এই সংখ্যা থেকে বোঝা যায় যে, নতুন ব্যবস্থাপনার অধীনে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।

আমানত ও শাখা সম্প্রসারণ

গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান আমানত ২৩ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, যা ২০১১ সালে ছিল ১১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। এই বৃদ্ধির হার ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা এবং এর আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ দেয়।

বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা সংখ্যা ২ হাজার ৫৬৮টি, যা ২০১১ সালে ছিল ২ হাজার ৫৬৫টি। এছাড়া, সবগুলো শাখা এখন কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে, যা ব্যাংকটির আধুনিকায়নের প্রতিফলন।

ভিক্ষুক সদস্য ও বিনা সুদে ঋণ কার্যক্রম

গ্রামীণ ব্যাংক ২০০২ সালে ভিক্ষুকদের বিনা সুদে ঋণ প্রদান শুরু করে। ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির ভিক্ষুক সদস্য ছিল প্রায় এক লাখ ১১ হাজার। তবে ২০২০ সালের জুন মাসে এই সংখ্যা কমে ৮৩ হাজার ২৯৫ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। ভিক্ষুকদের ঋণের পরিমাণ ২০১১ সালে ছিল প্রায় ১৬ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের জুন মাসে বেড়ে হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। এই ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে অনেক ভিক্ষুক তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুপস্থিতিতে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যক্রম কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত হয়নি বরং তা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। ঋণ বিতরণ, ঋণ আদায়, এবং সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে, ব্যাংকটি তার কার্যক্রম সফলতার সাথে পরিচালনা করছে। নতুন নেতৃত্বের অধীনে গ্রামীণ ব্যাংক কেবলমাত্র একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি শক্তিশালী আর্থিক সংস্থা হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের গরিব মানুষের আর্থিক ক্ষমতায়ন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

আরো পড়ুন:

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে

Related Posts

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা…

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ: নাগরিক কমিটির প্রতিবেদন গতকাল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক কমিটি ও স্বাস্থ্য…

One thought on “ইউনূসহীন গ্রামীণ ব্যাংক কেমন করছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You Missed

একদিনে টাঙ্গাইলের পাঁচ জমিদার বাড়ি ভ্রমণ

একদিনে টাঙ্গাইলের পাঁচ জমিদার বাড়ি ভ্রমণ

১ অক্টোবর থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে

১ অক্টোবর থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত

সোনার দাম বাড়লো

সোনার দাম বাড়লো

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ

হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লার মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি

হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লার মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি