চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন ২০১৯-২০ সেশনের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র মো. আবু হাসান। অভিযুক্ত হিসেবে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার প্রেক্ষাপট
গত ১৫ জুলাই বিকাল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের প্রাঙ্গণে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল চলাকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এজাহার অনুযায়ী, ছাত্রলীগের নেতা সৌমেন দত্তের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র, লোহার রড, স্ট্যাম্প এবং লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। অভিযোগ করা হয়েছে, ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতির মধ্যে তাদের উপর এই হামলা হয়, যার ফলে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
অভিযুক্তদের তালিকা
মামলায় যেসব অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন হচ্ছেন:
- সৌমেন দত্ত, স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী
- আকিব জাবেদ, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী
- অনুপ সরকার আকাশ, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী
- তায়েব পাঠান, বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী
- তানভীর আলম আকাশ, বোটানি বিভাগের শিক্ষার্থী
- মাহমুদুজ্জামান ওমর, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী
- মোহাম্মদ নাঈম, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী এছাড়াও মামলায় আরও ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা হাতে থাকা অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। সৌমেন দত্ত স্ট্যাম্প দিয়ে ভুক্তভোগী মো. মাহাবুবুর রহমানের মাথায় আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায় এবং সে গুরুতর আহত হয়। আরও অভিযোগ করা হয়, মোহাম্মদ নাইম কাঠের লাঠি দিয়ে মাহাবুবুরকে আঘাত করে, যার ফলে তার পিঠ থেঁতলে যায়।
অন্য অভিযুক্তরাও একইভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারী শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয় এবং তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। অভিযুক্তরা আরও হুমকি দেয় যে, যদি আন্দোলন থেকে সরে না দাঁড়ানো হয়, তবে প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে।
বাদীর বক্তব্য
মো. আবু হাসান বলেন, “আমরা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখনই অতর্কিত হামলা হয়। আমার বন্ধু মাহবুব গুরুতর আহত হয়েছে। আমি এই হামলার ঘটনায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, তবে আরও অভিযুক্তদের নাম এখনো অজানা রয়েছে। পুলিশের তদন্তের পর বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশের বক্তব্য
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, “আমরা এই মামলাটি গ্রহণ করেছি এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।” তিনি আশ্বস্ত করেন যে, তদন্ত শেষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং শিক্ষার্থীদের দাবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও কোটা সংস্কারের পক্ষে একত্রিত হয়ে মিছিল করে আসছিল। তবে ছাত্রলীগের কিছু সদস্যদের এই সহিংস হামলার ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা এই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
কেন এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ?
এই ঘটনা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্ররাজনীতি এবং আন্দোলনের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর এই ধরনের হামলা শিক্ষাজীবনকে প্রতিকূল করে তোলে এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শক্তিকে ক্ষুণ্ন করে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর সহিংস হামলা এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
আরো পড়ুন
কোটার সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনে সহস্রাধিক নিহত ও চার শতাধিক মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন