ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ মডেল শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে দারিদ্র্য বিমোচনে একটি প্রভাবশালী উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন। তবে ২০১১ সালের পর থেকে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং এটি নতুন নেতৃত্বে পরিচালিত হতে থাকে। এই নিবন্ধে আমরা ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা, সাফল্য, সমকালীন অবস্থা এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করব। ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক: সাফল্যের ইতিহাস ও সমকালীন বিশ্লেষণ
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা: ড. ইউনূসের উদ্যোগ
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রাথমিক ধারণাটি বাস্তবায়ন শুরু করেন। এই সময় তিনি জোবরা গ্রামের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পটি হাতে নেন। ড. ইউনূসের মূল লক্ষ্য ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করা যা তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম ও সাফল্য
১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে একটি বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে ২৫% মালিকানা সরকারের এবং ৭৫% মালিকানা ব্যাংকের সদস্যদের হাতে থাকে। এই ব্যাংকটি মূলত গ্রামীণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ দিয়ে তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের মূলে রয়েছে তার সদস্যদের মালিকানার ধারণা এবং ঋণ গ্রহীতাদের প্রতি ব্যাংকের কর্মীদের পদ্ধতিগত সহায়তা। এই মডেলটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী সহজেই ঋণ গ্রহণ করতে পারে এবং তা পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। ব্যাংকের ঋণ আদায়ের হার ৯৭% এর উপরে যা একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনে একটি বৈশ্বিক উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার ক্ষুদ্রঋণ মডেলটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের ৯৭টি দেশে অনুকরণ করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের সফলতা এবং ড. ইউনূসের কৃতিত্বের জন্যই তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন।
ড. ইউনূসের অনুপস্থিতিতে গ্রামীণ ব্যাংক
২০১১ সালে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর ব্যাংকটির কার্যক্রম নতুন নেতৃত্বের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। তবে ড. ইউনূসের অনুপস্থিতিতেও গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে চলছে। ব্যাংকের ঋণ বিতরণ, আদায় এবং অন্যান্য কার্যক্রমের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো নেতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি।
সমকালীন প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ব্যাংক
বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশে ২৫৬৮টি শাখা এবং প্রায় ১০৫ লাখ সদস্যের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণ আদায়ের পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকার উপরে রয়েছে। দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর অবদান অসামান্য এবং এটি এখনও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে, তবে ড. ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গি এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার মৌলিক ধারণা এই প্রতিষ্ঠানকে আগামীতেও সফলভাবে পরিচালিত করবে বলে আশা করা যায়। নতুন প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্রামীণ ব্যাংক তার কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করতে পারে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। এই ব্যাংকটি শুধুমাত্র দারিদ্র্য বিমোচনেই নয়, বরং সামাজিক উন্নয়ন এবং আর্থিক স্বাবলম্বিতায়ও অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। ড. ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার নেতৃত্বে গ্রামীণ ব্যাংকের সফলতা এখনো বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। যদিও ড. ইউনূস এখন ব্যাংকের নেতৃত্বে নেই, তবুও তার প্রবর্তিত মডেল এবং দর্শন ব্যাংকটিকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আরো পড়ুন:
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে
ইউনূসহীন গ্রামীণ ব্যাংক কেমন করছে