২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক, যা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম বৃহৎ ও মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন, বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের জন্য আরেকটি হতাশাজনক অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও ৫ জন ক্রীড়াবিদ এই অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন সাঁতার, অ্যাথলেটিক্স, আর্চারি, এবং শুটিংয়ে, তাদের কেউই কোনো পদক অর্জন করতে সক্ষম হননি। বরং, অলিম্পিকের মঞ্চ তাদের জন্য একধরনের শিক্ষাসফর হিসেবে দেখা দিয়েছে, যেখানে তাদের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে হয়েছে ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে। প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪: বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি শিক্ষাসফর
বাংলাদেশের অলিম্পিক অংশগ্রহণ: একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা
বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১১টি আসরে অংশগ্রহণ করেছে। তবে, এখনও পর্যন্ত কোনো ক্রীড়াবিদ বাংলাদেশকে অলিম্পিকে পদক এনে দিতে পারেননি। প্রতিবারই, উচ্চ প্রত্যাশা নিয়ে ক্রীড়াবিদরা অলিম্পিকে অংশ নিলেও, তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে। এ বছরের প্যারিস অলিম্পিকও এর ব্যতিক্রম ছিল না।
ইমরানুর রহমান: বাংলাদেশের দ্রুততম মানবের হতাশা
১০০ মিটার স্প্রিন্টে বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমানের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। তার সেরা টাইমিং ১০.১১ সেকেন্ড হলেও, প্যারিস অলিম্পিকে তিনি তার সেরাটা দেখাতে ব্যর্থ হন। তিনি হিটে ষষ্ঠ হয়ে ১০.৭৩ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেন। তার দৌড়ের শুরুর অংশে ভালো পারফরম্যান্স করলেও, শেষের দিকে তিনি পিছিয়ে পড়েন। এই ব্যর্থতা ইমরানুরের জন্য একটি বড় ধাক্কা, যা তাকে ভবিষ্যতের জন্য আরও প্রস্তুত হতে উৎসাহিত করবে।
সোনিয়া খাতুন: নারীদের ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইল সাঁতারে হতাশা
নারীদের ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইল সাঁতারে সোনিয়া খাতুনের সেরা টাইমিং ছিল ৩০.১১ সেকেন্ড। তবে, প্যারিস অলিম্পিকে তিনি ৩০.৫২ সেকেন্ড সময় নিয়ে হিট থেকে বিদায় নেন। ৮৯ জন সাঁতারুর মধ্যে তিনি ৬৪তম হন। সোনিয়ার এই পারফরম্যান্স তার পূর্বের সেরা টাইমিং থেকে পিছিয়ে পড়া, যা তার জন্য একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সামিউল ইসলাম রাফি: সেরা টাইমিং করেও হিট থেকে বাদ
১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারে সামিউল ইসলাম রাফি তার সেরা টাইমিং করেও হিট থেকে বাদ পড়েন। তিনি ৫৩.১০ সেকেন্ড সময় নিয়ে আটজনের মধ্যে পঞ্চম হন, যা তার পূর্বের সেরা টাইমিং ৫৩.১২ সেকেন্ড থেকে সামান্য ভালো। তবে, এই পারফরম্যান্স তাকে ফাইনালে পৌঁছাতে সাহায্য করেনি। এই ব্যর্থতা তার জন্য একটি বড় শিক্ষা, যা তাকে ভবিষ্যতের জন্য আরও কঠোর পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করবে।
সাগর ইসলাম: আর্চারিতে ব্যর্থতার গল্প
আর্চারি ইভেন্টে সাগর ইসলামের প্রতি সবচেয়ে বেশি আশা ছিল। তবে, তিনি বাছাইপর্ব থেকেই বিদায় নেন। তিনি রিকার্ভ পুরুষ এককের এলিমিশনেশন রাউন্ডের প্রথম ধাপেই ৬-০ সেট পয়েন্টে হেরে যান। এই পরাজয় তার জন্য একটি কঠিন ধাক্কা হিসেবে এসেছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও ভালো প্রস্তুতির জন্য উৎসাহিত করবে।
রবিউল ইসলাম: শুটিংয়ে হতাশাজনক পারফরম্যান্স
১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে প্যারিস অলিম্পিকে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের শুটার রবিউল ইসলাম। তবে, বাছাইপর্বে তিনি ৪৩তম স্থানে থেকে বিদায় নেন। তিনি স্কোর করেছেন মাত্র ৬২৪.২, যা তার ব্যক্তিগত সেরা স্কোরের (৬২৮) থেকেও কম। রবিউলের এই ব্যর্থতা তাকে আরও পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করবে এবং ভবিষ্যতে ভালো পারফরম্যান্সের জন্য প্রস্তুত করবে।
পাকিস্তানের আরশাদ নাদিম: সীমিত সুবিধা থেকেও সাফল্যের গল্প
প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের ব্যর্থতা যেমন হতাশাজনক, তেমনি পাকিস্তানের জ্যাভলিন থ্রোয়ার আরশাদ নাদিমের সাফল্য একটি অনুপ্রেরণার গল্প। সীমিত সুবিধা নিয়েও তিনি স্বর্ণ পদক জয় করেছেন। তার এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪ বাংলাদেশের জন্য আরেকটি শিক্ষাসফর হিসেবে দেখা দিয়েছে। যদিও ক্রীড়াবিদরা তাদের সেরা চেষ্টা করেছেন, তবুও তারা কোনো পদক জিততে পারেননি। তবে, এই অভিজ্ঞতা তাদের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে, যা তাদের ভবিষ্যতে আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশকে অলিম্পিকে সফল হতে হলে ক্রীড়াবিদদের আরও প্রস্তুতি, সুবিধা, এবং মনোবল বৃদ্ধির প্রয়োজন। দেশের ক্রীড়া সংগঠনগুলোকেও এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ অলিম্পিকে সাফল্য অর্জন করতে পারে।
আরো পড়ুন:
অলিম্পিকে এআর রহমানের ‘তাল সে তাল মিলা’-র ছন্দে জলকেলি সুন্দরীদের
প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪ এর সমাপনী অনুষ্ঠান
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে
ইউনূসহীন গ্রামীণ ব্যাংক কেমন করছে