সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার হার সম্প্রতি নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে সুইস ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশিরা। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা
বাংলাদেশিদের আমানত: অতীত থেকে বর্তমান
এসএনবির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ সাড়ে ৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে কমে ১ কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ হয়েছে। এই বিপুল পতন বিশেষজ্ঞদের নজর কেড়েছে। ২০২২ সালে আমানতের পরিমাণ ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ থেকে কমে ৫ কোটি ৫০ লাখ ফ্রাঁতে নেমে এসেছিল। আর ২০২৩ সালে তা আরও কমে ১ কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁতে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৩৮ কোটি টাকার সমান।
সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তা: আকর্ষণ ও বিতর্ক
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পৃথিবীব্যাপী পরিচিত তাদের কঠোর গোপনীয়তার জন্য। দেশটির আইন গ্রাহকদের গোপনীয়তা দৃঢ়ভাবে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। এ কারণে অনেকেই তাদের বৈধ-অবৈধ উপার্জিত অর্থ সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা রাখেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই গোপনীয়তার নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এবং সমালোচনা শুরু হওয়ায় অনেকে সুইজারল্যান্ড থেকে অন্য দেশে তাদের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন।
অর্থ সরানোর কারণসমূহ
বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:
- গোপনীয়তার নিয়ম পরিবর্তন: সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং সেক্টরে গোপনীয়তার নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে, যা অনেককে তাদের অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রভাবিত করেছে।
- বিশ্বব্যাপী কর ব্যবস্থা ও মানিলন্ডারিং নিয়ম: বিশ্বব্যাপী কর ব্যবস্থা ও মানিলন্ডারিং নিয়ম কঠোর হওয়ায় সুইস ব্যাংকগুলোও তাদের নিয়মাবলী কঠোর করছে, যা গ্রাহকদের উপর প্রভাব ফেলেছে।
- অস্থির অর্থনীতি: অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি অনেককে তাদের অর্থ নিরাপদ স্থানে রাখার জন্য নতুন উপায় খুঁজতে প্রভাবিত করেছে।
প্রভাব এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর কী প্রভাব ফেলবে তা সময়ই বলে দেবে। সুইস ব্যাংক থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা যদি চলতে থাকে, তবে এটি দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে, এই অর্থ যদি বৈধ পথে দেশে ফিরে আসে, তবে তা অর্থনীতিকে সহায়তা করতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই বিষয়টিতে নজর দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ভবিষ্যতে অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এটি নিয়ে আরও গভীর পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা করা প্রয়োজন।
আরো পড়ুন: