২০২৪ সালের ১০ জুলাই মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ভাষার কমেডি চলচ্চিত্র “ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড পাঞ্জাব” একটি নতুন ধারার মুভি যা ভারতীয় চলচ্চিত্রের কমেডি ঘরানায় এক নতুন সংযোজন। সিমারপ্রীত সিং পরিচালিত এবং টি-সিরিজ ফিল্মস ও লাভ ফিল্মসের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই মুভি একদল বন্ধুর বেপরোয়া এবং উত্তেজনাপূর্ণ যাত্রার গল্প বলে। ছবিটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন বরুণ শর্মা, জ্যাসি গিল, সানি সিং, এবং মনজোত সিং। ছবিটির মুক্তির পরপরই এটি দর্শক এবং সমালোচকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড পাঞ্জাব: কমেডির জগতে নতুন এক যাত্রা
ছবিটির পটভূমি এবং গল্পের বিশ্লেষণ
ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড পাঞ্জাবের গল্প শুরু হয় গৌরব জৈন নামের এক যুবকের জীবন থেকে, যে সর্বদাই তার অত্যাচারী বাবার কারণে ভীত। গৌরবের বিয়ে ঠিক হয়েছে তার প্রিয়তমা তারা’র সঙ্গে, কিন্তু তার বাবার চাপে তার উপর পাঁচ মিলিয়ন টাকা যৌতুক নেওয়ার দাবি রাখা হয়। এদিকে, গৌরবের বন্ধুদের মধ্যে একজন হচ্ছে আরোরা, যিনি পেশায় একজন বক্সার এবং কিছুটা বেপরোয়া প্রকৃতির।
বন্ধুরা একত্রিত হয় খন্না নামে আরেক বন্ধুর সমস্যা সমাধানে, যে তার প্রেমিকা বৈশালীর প্রতারণায় ব্যথিত। তারা খন্নাকে উজ্জীবিত করতে একটি পরিকল্পনা করে—বৈশালীর বিয়ের দিন তার সামনে গিয়ে “আই অ্যাম ওভার ইউ” বলে খন্না তার অতীতকে অতিক্রম করবে। কিন্তু এই যাত্রা খুব সহজ ছিল না।
পাঞ্জাবের গ্রামাঞ্চলে গৌরব অজান্তেই একজন ব্রাইডের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়ে। এরপরেই গল্পের গতিপথ পরিবর্তিত হতে শুরু করে। গৌরবের জীবন, খন্নার হৃদয়ের পরিবর্তন, এবং বেপরোয়া বন্ধুদের একের পর এক অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সিনেমাটি দর্শকদের হাস্যরসের এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
অভিনয় ও চরিত্রের বিশ্লেষণ
বরুণ শর্মা (গৌরব জৈন): বরুণ শর্মা তার স্বাভাবিক কৌতুকপূর্ণ এবং সজীব অভিনয়ের জন্য পরিচিত। গৌরব চরিত্রে তার অভিনয় ছবিটির হাস্যরসকে প্রাণবন্ত করেছে। তার চরিত্রে অভিব্যক্তি এবং বাচনভঙ্গি এক কথায় চমৎকার।
জ্যাসি গিল (খন্না): খন্না চরিত্রে জ্যাসি গিলের অভিনয় এক বিষণ্ন প্রেমিকের জীবনের প্রতিচ্ছবি। বৈশালীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদের পর যে আবেগ এবং যন্ত্রণার মধ্যে সে ছিল, তা তিনি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
সানি সিং (মান আরোরা): মান আরোরা চরিত্রে সানি সিংয়ের অভিনয় ছবিটিতে শক্তিশালী কমিক টাইমিং এবং সাহসী চরিত্র হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মনজোত সিং (হানি সিং): মনজোত সিং, যিনি চলচ্চিত্রে হানি সিং চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তার নির্দোষ এবং উদার চরিত্রটি ছবির অন্যতম মূল আকর্ষণ। তিনি ছবির শেষের দিকে এক সেন্টিমেন্টাল মুহূর্ত সৃষ্টি করেন যা পুরো কাহিনীকে সমৃদ্ধ করেছে।
প্রযোজনা ও নির্মাণ শৈলী
“ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড পাঞ্জাব” ছবির নির্মাণ শৈলীকে বিবেচনা করলে বলা যায় যে পরিচালক সিমারপ্রীত সিং একজন নবাগত হলেও তিনি তার পরিচালনা দক্ষতায় সকলকে মুগ্ধ করেছেন। ছবিটির চিত্রগ্রহণে নিগম বোমজানের ক্যামেরার কাজ এক কথায় অসাধারণ। চিত্রনাট্যের সাবলীলতা এবং সংলাপের রসবোধ দর্শকদের হাসিতে ভরিয়ে তোলে।
সঙ্গীত এবং পটভূমি সংগীত
এই ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন গুরু রন্ধাওয়া, লাভ রঞ্জন, বালি, এবং সৌরভ-ঐভব। ছবিটির পটভূমি সংগীত পরিচালনা করেছেন হিতেশ সোনিক। ছবির গানগুলি যেমন “হুসন ইরানি”, “আই অ্যাম ওভার ইউ”, এবং “সুটেবাজ হসিনা” শ্রোতাদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। গানগুলির কথামালা এবং সুরগুলো সিনেমার মজার মুহূর্তগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
সমালোচনা এবং প্রাপ্ত প্রতিক্রিয়া
“ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড পাঞ্জাব” মুক্তির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। অনেক সমালোচক ছবিটির কমেডি এবং কাহিনীর সাদামাটার কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের শুব্রা গুপ্তা ছবিটিকে ১.৫/৫ রেটিং দিয়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন যে ছবিটির হাস্যরস অনেকটাই ক্লিশে এবং ক্লান্তিকর। অন্যদিকে, হিন্দুস্তান টাইমসের মনিকা রাওয়াল কুকরেজা ছবিটিকে ইতিবাচক রিভিউ দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে ছবিটি হাস্যরসে ভরপুর এবং এর কমেডি দর্শকদের বিনোদিত করেছে।
“ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড পাঞ্জাব” যদিও সমালোচকদের থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, তবে এর কমেডি এবং বন্ধুত্বের গল্প দর্শকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। এই চলচ্চিত্রটি মূলত সেই দর্শকদের জন্য যারা হালকা মেজাজের কমেডি পছন্দ করেন এবং যারা বন্ধুত্বের কাহিনী উপভোগ করেন। সিমারপ্রীত সিং-এর পরিচালনায় “ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড পাঞ্জাব” একটি নতুন ধারার কমেডি ছবি হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আরো পড়ুন: