বারবার খাবার গরম করার ক্ষতি এবং নিরাপদ খাবার সংরক্ষণ
খাবার বারবার গরম করার ফলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়া এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করার গুরুত্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রতি ১০ জন মানুষের মাঝে একজন অনিরাপদ খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে, বয়স্ক, গর্ভবতী নারী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, এবং অপেক্ষাকৃত কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ এই সমস্যার প্রধান শিকার। বারবার খাবার গরম করার ক্ষতি
বারবার খাবার গরম করার ক্ষতি
খাবার বারবার গরম করলে প্রথমত এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত, এতে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে যা পেটের সমস্যা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। আবার, খাবারে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান দ্বিতীয়বার গরম করলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে বিষাক্ত উপাদান তৈরি হতে পারে যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
নিরাপদ খাবার সংরক্ষণের উপায়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিরাপদ খাবার সংরক্ষণের জন্য কিছু নির্দেশিকা দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: রান্নার সময় এবং খাবার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখা: কাঁচা খাবার এবং রান্না করা খাবার আলাদা রাখা উচিত যেন একটির ব্যাকটেরিয়া অন্যটিতে ছড়িয়ে না পড়ে।
- খাবার ভালোভাবে রান্না করা: অন্তত ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খাবার রান্না করা উচিত।
- নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় খাবার সংরক্ষণ করা: খাবার ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রাখতে হবে যেন ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে না পারে।
- নিরাপদ পানি ও কাঁচামাল ব্যবহার করা: রান্নার সময় নিরাপদ পানি ও ভালো মানের কাঁচামাল ব্যবহার করা উচিত।
ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের নিয়ম
ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নির্দেশনা মেনে চলা উচিত:
- পচনশীল খাবার দুই ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখা: পচনশীল খাবারকে দুই ঘণ্টার মাঝে ফ্রিজে রাখতে হবে।
- নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ: খাবার ফ্রিজে রাখার সময় তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হবে।
- ফ্রিজে বেশি দিন খাবার রাখা উচিত নয়: ফ্রিজে দীর্ঘদিন খাবার রেখে দিলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
খাবার থেকে বিষক্রিয়া প্রতিরোধ
খাবার সংরক্ষণ বা রান্নার সময় পলিথিন বা প্লাস্টিকের মোড়ক ব্যবহার না করা উচিত। কারণ গরম খাবার পলিথিন বা প্লাস্টিকে রাখলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হতে পারে যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
নিরাপদ খাবারের সুবিধা
নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা হলে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের উন্নতি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসার খরচ কমে আসতে পারে।
বাংলাদেশে নিরাপদ খাবার নিশ্চিতকরণ
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে সচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযোগ জানানোর পদ্ধতি: যেকোনো খাবারকে অনিরাপদ মনে হলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অফিসে সরাসরি গিয়ে বা ইমেইলে অভিযোগ জানানো যেতে পারে। এছাড়া, সংস্থার ওয়েবসাইটে দেয়া বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাদের ফোনে অভিযোগ জানানো যাবে।
সঠিকভাবে খাবার সংরক্ষণ এবং নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি। রান্নার এবং খাবার সংরক্ষণের সময় সতর্ক থাকুন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মেনে চলুন।
আরো পড়ুন: