গরমে ঘাম ও ঘামাচি হলে কী করবেন
গরমে ঘাম ও ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা। ঘামাচি হলো ঘামগ্রন্থির মুখ আটকে যাওয়ার ফলে হওয়া একটি চর্মরোগ, যা ত্বকে লালচে বা সাদা ফুসকুড়ির আকারে দেখা দেয়। ঘাম ও ঘামাচি প্রতিরোধ এবং নিরাময়ে কিছু কার্যকর উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ঘাম ও ঘামাচি প্রতিরোধে করণীয়
১. অতিরিক্ত গরম পরিবেশ এড়িয়ে চলা
অতিরিক্ত গরম পরিবেশ এড়িয়ে চলা ঘামাচি প্রতিরোধে অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ। গরমের সময় অধিকাংশ সময় সম্ভব না হলেও যতটা সম্ভব ঠান্ডা জায়গায় থাকা উচিত।
২. ঘাম মুছে ফেলা
শরীর ঘামলে দ্রুত পরিষ্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে ঘাম মুছে ফেলা জরুরি। কাপড়টি ভেজা রাখলে ভালো। বিশেষ করে বগল, কুঁচকি বা গলা বেশি ঘামে, তাই এসব জায়গা নিয়মিত মুছে ফেলুন।
৩. সুতি পোশাক পরিধান
সুতি পোশাক বেশি আরামদায়ক এবং ত্বকের জন্য ভালো। ঘাম হলে দ্রুত পোশাক বদলে ফেলা উচিত।
৪. রোজ সাবান দিয়ে গোসল
প্রতিদিন একবার ভালোভাবে গোসল করুন। বারবার গোসল করতে না পারলেও একবার ভালোভাবে গোসল করাই যথেষ্ট।
৫. ট্যালকম পাউডার ব্যবহার
ঘাম কমাতে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। সুগন্ধবিহীন পাউডার ব্যবহার করা ভালো, কারণ সুগন্ধি উপাদান ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বাইরে গেলে পাউডার এবং বাড়তি রুমাল বা কাপড় সঙ্গে রাখুন।
ঘামাচি হলে করণীয়
১. ঠান্ডা পরিবেশে থাকা
ঘামাচি হলে ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এতে আরাম পাওয়া যায় এবং ঘামাচির প্রভাব কমে।
২. ঘামাচির স্থান মুছে ফেলা
ঘামাচির স্থানে আলতো করে পরিষ্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিন। পিঠে ঘামাচি হলে একাধিকবার গোসল করতে পারেন।
৩. অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ
চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। তবে সব ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ সবার জন্য উপযুক্ত নয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪. অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মলম
ঘামাচির জায়গায় ক্ষত হলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মলম ব্যবহার প্রয়োজন।
৫. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
ঘামাচির স্থানে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। এটি যন্ত্রণা কমায়, তবে ঘামাচির চিকিৎসা নয়।
ঘাম ও ঘামাচি প্রতিরোধে করণীয় অন্যান্য পরামর্শ
পর্যাপ্ত পানি পান
গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
তাজা ফল, শাকসবজি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। এ ধরনের খাদ্য শরীরকে পুষ্টি জোগায় এবং ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
নিয়মিত বিশ্রাম
শরীরকে আরাম দিতে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। এতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ঘামাচি কমে।
হালকা ব্যায়াম
গরমে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন। হালকা ব্যায়াম শরীরকে ফিট রাখে এবং অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা করে।
সঠিক স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার
ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত তেলযুক্ত ক্রিম বা লোশন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
ঘাম ও ঘামাচি থেকে মুক্ত থাকার কিছু বাড়তি টিপস
- ত্বক শুষ্ক রাখার জন্য নিয়মিত বেবি পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
- সূর্যের সরাসরি তাপ থেকে বাঁচতে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন।
- বাইরে থেকে আসার পরপরই ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- গরমে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
গরমে ঘাম ও ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক যত্ন নিলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সঠিক পোশাক, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত গোসল এবং সঠিক স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে ঘামাচি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা নিয়ে গরমে সুস্থ থাকা সম্ভব।
আরও পড়ুন..