প্রাচীনকালে নারীদের যৌনতা নিয়ে চিন্তাভাবনা ও জীবনযাপন: ডেইজি ডানের বই থেকে
প্রাচীনকালে নারীদের যৌন জীবন ও চিন্তাভাবনা নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিবরণে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। ডেইজি ডানের নতুন বই ‘দ্য মিসিং থ্রেড‘ এর আলোকে আমরা প্রাচীনকালের নারীদের যৌনতা নিয়ে তাদের ধারণা ও তাদের জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারি। প্রাচীনকালে নারীরা যৌনতা নিয়ে আসলে কী ভাবতো?

প্রাচীনকালের নারীদের জীবনযাপন ও যৌনতা
খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে গ্রিক কবি সেমোনিদেস অব আমোরগোস নারী চরিত্রকে দশটি ভিন্ন ধরণে বর্ণনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ধরণ হল:
- শুকরের মতো নারী: এরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার চেয়ে খেতে বেশি পছন্দ করেন।
- শিয়ালের মতো নারী: এদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা শিয়ালের মতো প্রখর।
- গাধার মতো নারী: এদের যৌন সঙ্গীর সংখ্যা একাধিক থাকে।
- কুকুরের স্বভাবের নারী: এদের মধ্যে অবাধ্যতার ছাপ বেশি দেখা যায়।
সেমোনিদেসের এই বর্ণনা প্রাচীনকালের নারীদের সম্পর্কে পুরুষদের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। এ ধরনের বর্ণনা নারীদের যৌনতার বিষয়ে পুরুষদের বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের প্রতিফলন ঘটায়।
স্যাফোর কবিতা ও নারীর যৌন অনুভূতি
গ্রিসের নারী কবি স্যাফো খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে লিখেছিলেন, যেখানে তিনি নারীর যৌন আকাঙ্ক্ষার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তাঁর কবিতায় একজন নারীর অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে: “হৃদয়ে হাওয়ার দোল, কণ্ঠে কাঁপন, শরীরের শিরায় আগুনের হলকা বয়ে যাওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, শরীর-জুড়ে ঠাণ্ডা ঘাম ও কাঁপুনি”। এ সবই যৌন আকাঙ্ক্ষার পরিচায়ক।
প্রাচীনকালের যৌন পরামর্শ
প্রাচীনকালের কিছু লেখায় নারীদের যৌন পরামর্শ পাওয়া যায়। গ্রীক দার্শনিক থিয়ানো তাঁর বান্ধবী ইউরিডিসকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, “একজন নারী তার স্বামীর বিছানায় যাবার সময় কাপড় এবং লজ্জা একসাথে ছুঁড়ে ফেলা উচিত”। থিয়ানোর এই পরামর্শ সেই সময়ের নারীদের যৌন জীবনকে উন্মোচন করে।

পতিতাবৃত্তির বর্ণনা
পম্পেইয়ের মতো প্রাচীন পতিতালয়ে নারী যৌনকর্মীদের কার্যকলাপের বর্ণনা পাওয়া যায়। সেই সময়ের যৌনকর্মীরা তাদের অভিজ্ঞতা দেয়ালে লিখে রাখতেন। এথেনীয় রাজনীতিবিদ অ্যাপোলোডোরাস নারীদের জীবনের দুরবস্থার বর্ণনা করেছিলেন, যা সেই সময়ের পতিতাবৃত্তির কষ্টের পরিচায়ক।
পুরুষ লেখকদের দৃষ্টিভঙ্গি
প্রাচীনকালীন বেশিরভাগ ইতিহাস পুরুষদের দ্বারা লেখা হয়, যা নারীদের যৌনতার বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরেছে। খ্রিস্টপূর্ব ৪১১ সালে কৌতুকভিনেতা নাট্যকার আরিষ্টোফেনিস তাঁর ‘লাইসিস্ট্রাটা’ নাটকে এথেন্সের নারীদের যৌন ধর্মঘটের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির জন্য তাদের স্বামীদের বাধ্য করার ঘটনা বর্ণনা করেন। এই নাটকে নারীদের যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
প্রাচীন গ্রীস ও রোমের যৌনতা বিষয়ক তথ্য
প্রাচীন গ্রীস ও রোমে ডিলডোজ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রজননের আচার-অনুষ্ঠান পালন ও আনন্দের জন্য সেগুলো ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন ফুলদানিতেও সেগুলোর চিত্র অঙ্কিত আছে। রোমে এগুলো তাবিজের মতো ব্যবহার হতো এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো।
ডেইজি ডানের ‘দ্য মিসিং থ্রেড’ বইটি প্রাচীনকালের নারীদের যৌনতা এবং তাদের জীবনযাপনের বিভিন্ন দিক উন্মোচন করে। প্রাচীনকালের নারী ও পুরুষদের যৌনতা বিষয়ক চিন্তাভাবনার পার্থক্য এবং পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বইটি প্রাচীন পৃথিবীর নারীদের যৌনতা সম্পর্কে গভীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে এবং আমাদেরকে সেই সময়ের নারীদের জীবন সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে।
আরো পড়ুন: