মুজিবনগর সরকার: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায়, যা পরে মুজিবনগর নামে পরিচিতি পায়, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই দিনটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই ব্লগ পোস্টে, মুজিবনগর সরকারের গঠন ও শপথ গ্রহণের ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।
মুজিবনগর সরকারের প্রেক্ষাপট
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী “অপারেশন সার্চলাইট” শুরু করে। ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে গণহত্যা চালানোর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয় এবং একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
অস্থায়ী সরকারের গঠন
মুজিবনগর সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র ও ত্রাণ মন্ত্রী করা হয়। কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান
১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই ঐতিহাসিক দিনটি আয়োজনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন মেহেরপুরের সাবডিভিশনাল অফিসার তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি জানান, অনুষ্ঠানের জন্য বৈদ্যনাথতলায় একটি আমবাগান বাছাই করা হয়েছিল, কারণ সেটি আকাশ থেকে সহজে দেখা যেত না এবং দুর্গম ছিল।
শপথ গ্রহণের প্রক্রিয়া
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গণপরিষদের স্পিকার ইউসুফ আলী ‘ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স’ পাঠ করেন এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান। শপথ গ্রহণ শেষে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সাংবাদিক।
মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রম
মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন কার্যক্রম সমন্বিতভাবে পরিচালিত হয়। মুজিবনগর সরকারই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন আদায়ে কাজ করে।
মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এই সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয় এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বৈদ্যনাথতলার সেই ঐতিহাসিক আমবাগান আজও বাংলাদেশের মানুষের মনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।