কাগজের ইতিহাস: একটি বিস্তৃত আলোচনা
প্রাচীন যুগের লেখার মাধ্যম
কাগজ আবিষ্কারের আগে মানুষ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে লিখত। অনেক দেশে পাথরে খোদাই করেই লেখা হতো। মেসোপটেমিয়ার মানুষ নরম মাটিতে লিখে সেটাকে পোড়াইয়া ইঁটের টালি তৈরি করত। এই ইঁটের টালিই তাদের কাগজের কাজ করত।
প্রাচীন কালের লেখার মাধ্যমের অসুবিধা
ইঁটের টালি ব্যবহার করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ছিল। শিক্ষার্থীরা পাঠশালায় যাওয়ার সময় অনেকগুলি ইঁটের টালি নিয়ে যেত। সামান্য একটি চিঠি পাঠাতে হলেও প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো।
পাতা এবং পেপিরাস
ভারতবর্ষে গাছের পাতায় লেখার রীতি চালু ছিল। ৬০০০ বছর আগে ইজিপ্টে ‘পেপিরাস‘ গাছের কচি ছাল পিটিয়ে একটি কাগজের মতো বস্তু তৈরি করত, যেখান থেকে ইংরেজি শব্দ ‘পেপার’ এসেছে। যদিও পেপিরাসকে কাগজ বলা যায় না।
কাগজের আবিষ্কার এবং বিস্তার
চীনদেশে প্রথম কাগজ তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার হয়। চীনারা এই বিদ্যা গোপন রাখত। পরে কিছু চীনা কারিগর আরবদের সঙ্গে যুদ্ধে ধরা পড়ে এবং আরবরা কাগজ তৈরি শিখে নেয়। এরপর থেকে কাগজ তৈরির প্রযুক্তি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিক কাগজ তৈরির প্রক্রিয়া
কাগজ তৈরির প্রথমদিকে ছেঁড়া নেকড়া ব্যবহার করা হতো। নেকড়াকে ভিজিয়ে এবং পিটিয়ে মণ্ড তৈরি করে তা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে, ঝাঁকিয়ে এবং বেলে কাগজ বানানো হতো। কাগজ তখন একটি সৌখীন জিনিস ছিল, কিন্তু পরে এর দাম কমে আসে এবং কাগজের প্রচলন বাড়ে।
কাগজ তৈরির উপকরণ
প্রথমে স্পেন দেশে এস্পার্টো ঘাস থেকে কাগজ তৈরি হতো। পরে আখের ছিবড়া, কলার খোসা, পাট, খড়, ঘাস, বাঁশ, কাঠ ইত্যাদি বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা শুরু হয়। বর্তমানে কাঠ, এস্পার্টো ঘাস এবং পুরাতন নেকড়া ও কাগজ থেকে কাগজ প্রস্তুত হয়।
কাগজ তৈরির আধুনিক প্রক্রিয়া
কাঠ থেকে কাগজ তৈরির প্রক্রিয়া খুবই জটিল। আমেরিকা ও নরওয়ের জঙ্গল থেকে কাঠ এনে কুচি করে, গুঁড়ো করে এবং সিদ্ধ করে মণ্ড তৈরি করা হয়। এই মণ্ডকে কলের মাধ্যমে ঝোল তৈরি করে, ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে এবং রোলারের সাহায্যে বেলিয়ে কাগজ তৈরি করা হয়।
কাগজের কলের কার্যপ্রণালী
কাগজের কলের মাধ্যমে কাঠ, ঘাস বা নেকড়ার ঝোল খেয়ে কল কাগজ তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় কাগজ ক্রমাগত চাপ দিয়ে, বেলিয়ে, ঘষে এবং পালিশ করে তৈরি হয়। আধুনিক কলে সমস্ত কাজ আপনা-আপনি হয়, এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে কাগজ তৈরি হয়।
কাগজের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বিস্তৃত। প্রাচীন কালের পাথর, ইঁটের টালি এবং পাতার ব্যবহার থেকে শুরু করে আধুনিক কালের কলের মাধ্যমে কাঠ এবং অন্যান্য উপকরণ থেকে কাগজ তৈরির প্রক্রিয়া পর্যন্ত, কাগজের বিবর্তন মানব সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
আরো পড়ুন:
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা