বাবা দিবস: ইতিহাস, গুরুত্ব এবং উদযাপনের রীতিনীতি
বাবা দিবসের ধারণাটি প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত হয়। সনোরা স্মার্ট ডড নামের একজন নারী ১৯০৯ সালে দিনটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তাঁর বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট একজন সিভিল ওয়ার ভেটেরান ছিলেন এবং সনোরার মা মারা যাওয়ার পর তিনি একাই ছয়টি সন্তানকে লালন-পালন করেন। মায়েদের সম্মানে মা দিবস পালনের পর সনোরা তাঁর বাবা ও অন্যান্য বাবাদের সম্মান জানানোর জন্য একটি বিশেষ দিনের প্রস্তাব করেন। ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রতিটি ‘বাবা’
বাবা দিবসের সূচনা
১৯১০ সালের ১৯ জুন, ওয়াশিংটনের স্পোকানে প্রথম বাবা দিবস পালিত হয়। ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন দিনটিকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।
বাবা দিবসের গুরুত্ব
বাবা দিবস শুধু বাবাদের জন্য একটি বিশেষ দিন নয় বরং এটি জীবনের সব পুরুষ অভিভাবক এবং পথপ্রদর্শকদের সম্মান জানানোর একটি সুযোগ। এ দিনে আমরা জীবিত এবং প্রয়াত বাবাদের শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের স্মৃতিচারণা করে এবং তাঁদের দেওয়া শিক্ষাকে জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করি।
বিশ্বব্যাপী বাবা দিবসের উদযাপন
বাবা দিবস বিশ্বজুড়ে পালিত হয়, যদিও বিভিন্ন দেশে দিনটি ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদযাপিত হয়। উদাহরণস্বরূপ:
- যুক্তরাজ্য ও কানাডায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই দিনে পালিত হয়।
- অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রোববার পালিত হয়।
- জার্মানিতে খ্রিস্টের স্বর্গারোহণের দিনে পালন করা হয়, যা প্রায় ৪০ দিন পর আসে।
- থাইল্যান্ডে ৫ ডিসেম্বরে বাবা দিবস, রাজা ভূমিবল আদুল্যাদেজের জন্মদিন পালন করা হয়।
- সুইডেনে ১৯৩১ সালে জুন মাসে পালিত হতো, কিন্তু পরে নভেম্বরের দ্বিতীয় রোববারে স্থানান্তরিত হয়।
একটি হৃদয়স্পর্শী গল্প: বাবার সাথে প্রথম চাকরির দিন
একদিন সকালে আমি প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিলাম। আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। বাবা তা বুঝতে পেরে বললেন, “আজকের দিনটা তোর জীবনের একটি নতুন অধ্যায়। সব সময় মনে রাখিস, সৎভাবে পরিশ্রম করবি, কখনো হাল ছাড়বি না। তুই সফল হবি, কারণ তোর মধ্যে সেই সামর্থ্য আছে।”
বাবার কথাগুলো আমাকে সাহস দিল এবং আমি ইন্টারভিউতে ভালো করলাম। আমার চাকরি হলো এবং সেই দিনটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। আজ আমি সফলভাবে আমার পেশাগত জীবন পরিচালনা করছি, যার পেছনে বাবার প্রেরণা ও আশীর্বাদ ছিল। বাবার সেই কথাগুলো আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে একটি পথপ্রদর্শক হয়ে আছে।
বাবার অনুপ্রেরণায় বিশ্বভ্রমণ
আমার বাবা আমাদের বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়েছেন। তাঁর কাজের সুবাদে আমরা সুইডেন থেকে শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গেছি। প্রতিটি ভ্রমণ আমাদের জীবনের মূল্যবান অভিজ্ঞতা ছিল।
বাবার স্নেহময় আচরণ
বাবা সব সময় আমাদের কাছে স্নেহময় এবং বন্ধুর মতো ছিলেন। তাঁর কঠোর শাসনের পেছনে লুকিয়ে ছিল আমাদের প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালোবাসা।
বাবাকে সম্মান ও ভালোবাসা দেখানোর উপায়
১. সময় দিন: বাবার সঙ্গে সময় কাটান। ব্যস্ত জীবনের মধ্যে একটু সময় বের করে বাবার সঙ্গে কথা বলুন, গল্প করুন, প্রিয় কাজগুলোতে অংশ নিন।
২. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। তাদের করা ছোট কাজগুলোর জন্য ধন্যবাদ জানান।
৩. স্বাস্থ্যের খোঁজখবর: বাবার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজখবর রাখুন। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করুন এবং ওষুধ খাওয়ার জন্য নজর দিন।
৪. স্মৃতিচারণা: পুরানো স্মৃতিগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। ফটো অ্যালবাম দেখুন বা পুরানো দিনের গল্প করুন।
৫. সাহায্য ও সমর্থন: বাবার কাজে সাহায্য করুন এবং তাঁদের যেকোনো সমস্যায় পাশে দাঁড়ান।
৬. উপহার দিন: বাবাকে তাদের প্রিয় কোনো উপহার দিন। এটি প্রিয় বই, খাবার, অথবা কোনো স্মারক হতে পারে।
৭. শিখুন এবং অনুসরণ করুন: বাবার শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণ করুন। তাঁদের দেওয়া মূল্যবোধ এবং শিক্ষা মেনে চলুন।
৮. বিশেষ দিনে বিশেষ আয়োজন: বাবা দিবস বা জন্মদিনে তাদের জন্য বিশেষ কিছু করুন।
৯. শুনুন: বাবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাঁদের মতামত, পরামর্শ এবং অনুভূতিগুলো গুরুত্ব সহকারে নিন।
১০. ভালোবাসা প্রকাশ: প্রতিদিন বাবাকে ভালোবাসার কথা বলুন। কথায় এবং কাজে তাঁদের প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করুন।
১১. দায়িত্ব ভাগ করে নিন: বাবার দায়িত্বগুলো ভাগ করে নিন। বিশেষত যদি বাবা বয়স্ক হন বা অসুস্থ হন।
১২. শিক্ষা ও পরামর্শ নিন: বাবার কাছ থেকে শিক্ষা ও পরামর্শ নিন। তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন।
১৩. সহনশীলতা: বাবার মতামত এবং সিদ্ধান্তের প্রতি সহনশীল হোন।
১৪. পরিবারে সম্পর্ক উন্নয়ন: পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গ বাবার সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করুন।
১৫. প্রযুক্তিগত সহায়তা: বাবাকে প্রযুক্তিগত সমস্যায় সাহায্য করুন। ফোন, কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহারে সহায়তা করুন।
আমাদের মা–বাবা আমাদের জীবনের প্রধান রোল মডেল এবং পথপ্রদর্শক। তাঁদের ভালোবাসা এবং ত্যাগের মূল্যায়ন করতে এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি।
শুভ বাবা দিবস!