ইরানের আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: ভোট গণনায় এগিয়ে সাঈদ জালিলি
ইরানে আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে এখন চলছে ভোট গণনা। বার্তাসংস্থা রয়টার্স শনিবার (২৯ জুন) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগত সাঈদ জালিলি ভোট পাওয়ার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার পরেই অবস্থান করছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পাজেশকিন।
ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহসেন ইসলামী রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ১ কোটিরও বেশি ভোট গণনা করা হয়েছে। যার মধ্যে কট্টরপন্থী সাবেক পারমাণবিক আলোচক সাঈদ জালিলি ৪২ লাখ ৬০ হাজার ভোট পেয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাসুদ পাজেশকিন পেয়েছেন ৪২ লাখ ৪০ হাজার ভোট।
একাধিক নির্বাচনী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৪০ শতাংশ ভোটার। দেশটির ধর্মীয় নেতারা যে পরিমাণ ভোটার উপস্থিতির আশা করেছিলেন, এটি তার চেয়ে অনেক কম। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাজধানী তেহরান এবং অন্যান্য শহরের ভোটকেন্দ্রগুলো খালি ছিল।
ইরানের আধাসরকারি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি ‘রানঅফে’ গড়াবে এটি অনেকটাই নিশ্চিত। ইরানের নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেসব প্রার্থী অংশ নেবেন তাদের মধ্যে কেউ যদি সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে চান তাহলে তাকে মোট ভোটের ৫০ শতাংশ বা তারও বেশি ভোট পেতে হবে।
কোনো প্রার্থী এই ‘ম্যাজিক ফিগার’ স্পর্শ করতে না পারলে নির্বাচন গড়াবে রানঅফে। যেখানে সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এই রানঅফে যে প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
গত ২০ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ইব্রাহিম রাইসি। এরপর দেশটিতে আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৬ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দুজন নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে গতকাল শুক্রবারের নির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হয়।
নির্বাচন বিষয়ক বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছিল সংস্কারবাদী মাসুদ পাজেশকিন সর্বোচ্চ ভোট পাবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কম হওয়ায় ইরানের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা নানা মতামত প্রকাশ করছেন। অনেকে মনে করছেন, সাধারণ জনগণের মধ্যে আগ্রহ কমে যাওয়ার পেছনে সরকারের ওপর অসন্তোষ এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট মূল কারণ। এছাড়া, দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতিও ভোটার উপস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ইরানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সাঈদ জালিলি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তবে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কট্টরপন্থী নীতিমালা অব্যাহত রাখতে পারেন বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। অপরদিকে, মাসুদ পাজেশকিন নির্বাচিত হলে সংস্কারপন্থী নীতির প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
ইরানের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনের ফলাফলের দিকে গভীরভাবে নজর রাখছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কেমন হবে, তা নির্ধারণে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
আরো পড়ুন: