নারায়ণগঞ্জের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন: দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিনের মাথায় কারাগারে
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১০ দিনের মাথায় তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। স্ত্রীর করা যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের মামলায় আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন: দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিনের মাথায় কারাগারে
আদালতের আদেশ ও মামলার বিবরণ
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উম্মে সরাবন তহুরা মাকসুদ হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) রকিবউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মাকসুদ হোসেন আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করেন আদালত।
নির্বাচনী জয় এবং দায়িত্ব গ্রহণ
মাকসুদ হোসেন গত ৮ মে বড় ভোটের ব্যবধানে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১১ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাকসুদ। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতিও।
মামলার পেছনের ঘটনা
মাকসুদ হোসেনের স্ত্রী সুলতানা বেগম গত ২৩ এপ্রিল যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করেন। তার অভিযোগ, ১৯৯৮ সালে বিয়ের সময় মাকসুদ প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখেছিলেন। সুলতানা বেগম বিষয়টি জানতে পেরে তাকে বাড়িতে তোলার জন্য চাপ দেন। কিন্তু মাকসুদ তার কথা শোনেননি। উল্টো বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া সম্পত্তি বিক্রির জন্য স্ত্রীকে চাপ দেন।
সম্পত্তি বিক্রির দাবি এবং নির্যাতন
সুলতানা বেগমের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২২ সালে সম্পত্তি বিক্রির জন্য চাপ দিলে মাকসুদ তাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে রেখে দেন। ১৩ নভেম্বর তিনি যৌতুকের মামলা করেন। ২১ এপ্রিল রাতে মাকসুদ তার বন্ধুদের নিয়ে সুলতানা বেগমের বাবার বাড়িতে হাজির হন এবং মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। ওয়ারিশ সম্পত্তি বিক্রি করে মাকসুদের হাতে দিলে তাকে পুনরায় স্ত্রীর মর্যাদায় ঘরে তোলার প্রস্তাব দেন। সুলতানা বেগম প্রস্তাবে রাজি না হলে মাকসুদ তাকে হত্যার হুমকি দেন এবং মারধরের পর হুমকি দিয়ে চলে যান।
আদালতের সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ
আদালত মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে মাকসুদ হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং পুলিশ ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তৎপর রয়েছে।
মাকসুদ হোসেনের এই ঘটনায় তার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিনের মাথায় এমন একটি ঘটনায় জড়ানো প্রমাণ করে যে ক্ষমতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও নৈতিকতা ও আইন মানার গুরুত্ব অপরিসীম। নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ জনগণের মধ্যেও এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সমবেদনা ও সমালোচনা
মাকসুদ হোসেনের এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই তার কার্যক্রমের সমালোচনা করেছেন, আবার অনেকে তার প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তবে আইন অনুযায়ী বিচার হবে এবং সত্য উদঘাটন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন..