বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা আইন বাতিল: উপদেষ্টা পরিষদের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত থাকা ‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোনো সদস্য আর বিশেষ নিরাপত্তা পাবেন না। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
বৈঠকের পটভূমি ও উদ্দেশ্য
আজ (বৃহস্পতিবার) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয় যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে পরিবেশ বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। বৈঠকে আরও উল্লেখ করা হয় যে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরাপত্তা বিধান প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কার্যকর করা সম্ভব নয় বলে এই আইনটি বাতিলের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
জাতির পিতার পরিবারের নিরাপত্তা আইন: অতীতের প্রেক্ষাপট
২০০৯ সালে ‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন’ প্রণীত হয়েছিল, যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান করা হতো। এই আইনের অধীনে তাদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (Special Security Force) নিযুক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এই নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুবিধাদি প্রদান করার জন্য সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়।
বৈষম্য দূরীকরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্য দূরীকরণের দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেছে। তাদের মতে, কেবলমাত্র একটি পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সুবিধা প্রদানের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন একটি সুস্পষ্ট বৈষম্য সৃষ্টি করে।
আইনের বাতিলের সিদ্ধান্ত ও প্রাসঙ্গিক পরিবর্তন
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আইনটির বাতিলের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার বিষয়টিও বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সংশোধন অধ্যাদেশের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে। এ লক্ষ্যে ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’ সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় সমতা প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা বিলোপ করা হবে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া
উপদেষ্টা পরিষদের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী, তাদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিন্নমত দেখা দিতে পারে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৈষম্য দূর করার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে দাবি করছে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশে আইনের শাসন এবং সমানাধিকারের নীতির প্রতিফলন ঘটবে।
সমাপ্তি
‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে চলেছে। এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পরিবর্তন নয়, বরং সমতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে এর প্রভাব এবং ভবিষ্যতের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আরো পড়ুন
ম্যাডক সুপারন্যাচারাল ইউনিভার্সের ভক্ত হিসেবে, আমি অমর কৌশিকের “স্ত্রী ২” এর প্রশংসা করতে বাধ্য