বাংলাদেশকে ৬৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক: বে-টার্মিনাল উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান
সম্প্রতি বাংলাদেশকে ৬৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৬৩৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ। আজ (শনিবার) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস এ তথ্য জানায়। ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক বোর্ড এই অর্থ অনুমোদন করেছে।
ঋণের উদ্দেশ্য
সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশকে বে-টার্মিনাল গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে বিনিয়োগে সহায়তা করতে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এই উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি হবে এবং বন্দর বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি খরচ কমে আসবে।
প্রকল্পের মূল দিকনির্দেশনা
বে-টার্মিনাল সামুদ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ কিলোমিটার জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক ব্রেকওয়াটার নির্মাণ করা হবে। নতুন এই আধুনিক বে টার্মিনাল আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটরদের দ্বারা পরিচালিত হবে। এতে প্যানাম্যাক্স জাহাজের মতো বড় আকারের জাহাজগুলোর জন্য সুযোগ বাড়বে এবং জাহাজের টার্নঅ্যারাউন্ড সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯০ শতাংশ এবং এর ৯৮ শতাংশ কনটেইনার প্রবেশ করে। তবে এই বন্দর দিয়ে ছোট ফিডার জাহাজগুলো প্রবেশ করতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, “বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করে। যা উল্লেখযোগ্য সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়। বে টার্মিনাল একটি গেম চেঞ্জার হবে। এটি বর্ধিত বন্দর সক্ষমতা এবং পরিবহন খরচ ও সময় হ্রাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতার উন্নতি ঘটাবে। এর মাধ্যমে মূল বৈশ্বিক বাজারে নতুন সুযোগ উন্মোচন করবে।”
বেসরকারি বিনিয়োগের সংযোজন
আবদৌলায়ে সেক আরও বলেন, “প্রকল্পটি কন্টেইনার টার্মিনালগুলোর উন্নয়নের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকে একত্রিত করবে। সরকারি অর্থায়নের সাথে বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগ বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং সামগ্রিক বে টার্মিনাল উন্নয়নের সাথে যুক্ত ঝুঁকি কমাতে অবদান রাখবে।”
উন্নয়ন ও সংযোগ বৃদ্ধির প্রত্যাশা
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট এবং প্রকল্পের দলনেতা হুয়া টান বলেন, “বে টার্মিনাল দেশের সমুদ্রবন্দর অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারের সংযোগ উন্নত করতে অবদান রাখবে।” বে টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চিমে আনন্দনগর/সন্দ্বীপ চ্যানেলে অবস্থিত এবং ঢাকার সাথে বিদ্যমান সড়ক ও রেল যোগাযোগের কাছাকাছি।
উপকারভোগী
এটি বাংলাদেশের কন্টেইনারের পরিমাণের ৩৬ শতাংশ পরিচালনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিপিং কোম্পানি, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং মালবাহী ফরওয়ার্ডারসহ টেকসই পরিবহন পরিষেবাগুলোতে উন্নত অ্যাক্সেসের মাধ্যমে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই ঋণ অনুমোদন বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা রাখে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে এবং বিশ্বব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
আরো পড়ুন: