ঈদের আগে রেমিট্যান্সের জোয়ার: প্রবাসী আয়ের সোনালী দিন
প্রতিবছর ঈদের আগে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ার একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে সেই ধারা ছাপিয়ে গেছে পূর্বের সব রেকর্ড। প্রবাসী বাংলাদেশিরা জুন মাসের প্রথম ১৪ দিনে প্রায় ১৯ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। এই বিশাল অঙ্কের রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং ঈদের সময় অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল করেছে। ঈদের আগে রেমিট্যান্সের জোয়ার: প্রবাসী আয়ের সোনালী দিন
বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল প্রবাহ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসের প্রথম ১৪ দিনে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ দেশে এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা ধরে) এর পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, প্রতিদিন প্রায় ৯৯১ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে।
রেমিট্যান্সের উৎস ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পরিসংখ্যান
আলোচিত সময়ে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১২০ কোটি ৮১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।
গত মাসগুলোর রেমিট্যান্সের ধারাবাহিকতা
মে মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ৪৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলার।
২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্সের ধারা ছিল সন্তোষজনক। জানুয়ারিতে ২১০ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার এবং এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে।
বিগত বছরের রেমিট্যান্স পরিসংখ্যান
২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স ছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার, যা সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স।
ঈদুল আজহার অর্থনৈতিক প্রভাব
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রেমিট্যান্সের এই বিশাল প্রবাহ দেশের অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন খাতে এই অর্থ প্রবাহিত হওয়ায় বাজারের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামগ্রিক অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। প্রবাসী আয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা ও স্বীকৃতি জানানো প্রয়োজন, কারণ তাদের পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়তা করছে।
আরও পড়ুন..