কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি: আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির পূর্বাভাস
উজানের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার (১৫ জুন) বিকেল ৩টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৮৫ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৮২ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এই পানি এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, কিন্তু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি: আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির পূর্বাভাস
প্রভাবিত খেত ও সম্ভাব্য বন্যা
পানি বৃদ্ধির ফলে এসব নদ-নদীর তীরবর্তী নিচু অঞ্চলের বাদাম ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আগামী সপ্তাহে জেলায় একটি স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিন জেলায় বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে নদ-নদীগুলোর পানির স্তর আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবস্থান
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, “ভারতের উজানে ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রাম জেলার নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী সপ্তাহে জেলার নিম্নাঞ্চলের চরগুলো তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, “কুড়িগ্রামে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক আরও জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলি সমন্বিতভাবে কাজ করছে। বন্যা পরবর্তী সময়েও দ্রুত ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সম্ভাব্য পদক্ষেপ এবং প্রস্তাবনা
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে জরুরি খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া, পানি নিষ্কাশনের জন্য নদীগুলোর ধারাবাহিক পরিস্কার এবং বাঁধ নির্মাণ বা মেরামতের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কুড়িগ্রামে উজানের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানির দ্রুত বৃদ্ধি একটি গুরত্বপূর্ণ এবং সঙ্কটাপন্ন বিষয়। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি সমন্বিতভাবে কাজ করছে যাতে করে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং জনগণের জান-মাল রক্ষা করা যায়।
আরো পড়ুন: