পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামের কৃষক নাসির মৃধার গল্পটি নিঃসন্দেহে একটি অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী। ২০২২ সালে তিনি বাজার থেকে ৯০ হাজার টাকায় একটি কালো রঙের গরু কিনে আনেন। তার ছেলে গোলাম রব্বানী সেই গরুটিকে ভালোবাসা আর যত্নে লালন পালন করতে শুরু করেন, আর এই গরুটির নাম রাখেন ‘কুয়াকাটার কালো মানিক’।
কালো মানিকের পরিচর্যা ও আকার
গোলাম রব্বানীর অদম্য পরিশ্রম এবং ভালোবাসার ফলে, বর্তমানে কালো মানিকের ওজন ২৭ মণ। এই বিশাল আকৃতির গরুটিকে প্রতিদিন কাঁচা ঘাস, ভুট্টার গুড়া, খড়, খৈল খাওয়ানো হয় এবং তিনবার গোসল করানো হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে লালন পালন করা হয়, যাতে গরুটির স্বাস্থ্যের প্রতি কোনও ক্ষতি না হয়।
শিক্ষার পাশাপাশি গরুর যত্ন
গোলাম রব্বানী স্কুলের ছাত্র হলেও গরুর পরিচর্যায় কোন কমতি রাখেননি। এই বছর তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৪৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ভালোবাসার ফসল এই কালো মানিক।
বিক্রির জন্য প্রস্তুত
এই বছরের কোরবানির জন্য কালো মানিককে বিক্রির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গোলাম রব্বানীর বাবা নাসির মৃধা গরুটির দাম ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছেন। ন্যায্য দামে বিক্রির অপেক্ষায় আছেন তারা। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে, যারা কালো মানিক কিনবেন তাদের সঙ্গে ১০ কেজি ওজনের একটি খাসি বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নাসির মৃধা।
মানুষের ভিড় ও অনুপ্রেরণা
২৭ মণ ওজনের এই বিশাল ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছেন। কেউ ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন, কেউ দূর থেকে দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। গোলাম রব্বানীর সাফল্য দেখে অনেকে গরু পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন। তারা মনে করছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উপকূলীয় অঞ্চলে গরু মোটাতাজাকরণের খামার বৃদ্ধি পাবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কলেজ শিক্ষার্থী মো. রেদওয়ান বলেন, “আমিও অবসর সময়ে গরুর খামার গড়ে তুলতে চাই। গোলাম রাব্বানী ভাই পারলে আমিও পারব।”
গোলাম রব্বানী তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “২০২২ সালে আমার বাবা এই গরুটি বাজার থেকে ৯০ হাজার টাকায় কিনে আনেন। গরুটি দেখতে অনেক সুন্দর বিধায় আমি যত্নসহকারে লালন পালন করি। এখন গরুটির ওজন ২৭ মণ। এবার কোরবানিতে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছি। ভালো দামে বিক্রয় করতে পারলে আমার কষ্ট সার্থক হবে।”
তার বাবা নাসির মৃধা বলেন, “আমার ছোট ছেলে অনেক কষ্ট করে গরুটি লালনপালন করেছে। গরুটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রয় করতে পারলে ক্রেতাকে আমি ১০ কেজি ওজনের একটি খাসি উপহার দেব।”
উপসংহার
গোলাম রব্বানী এবং তার পরিবারের এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাদের কষ্ট এবং ভালোবাসা যেন সার্থক হয়, এটাই আমাদের কামনা। যারা কোরবানির জন্য একটি বিশেষ কিছু খুঁজছেন, তাদের জন্য ‘কুয়াকাটার কালো মানিক’ একটি চমৎকার পছন্দ হতে পারে।