জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ: নাগরিক কমিটির প্রতিবেদন
গতকাল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক কমিটি ও স্বাস্থ্য উপ-কমিটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাম্প্রতিক তথ্য উপস্থাপন করে। এই সম্মেলনে জানানো হয় যে, জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থানে ৩১ হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। তবে এই সংখ্যাটি চূড়ান্ত নয়, কারণ অনেক আহতের তথ্য একাধিকবার এসেছে এবং অনেকের নাম এখনও তালিকায় যুক্ত হয়নি।
আহতদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই
স্বাস্থ্য উপ-কমিটির সদস্য সচিব তারেক রেজা জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে গঠিত স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ প্রচেষ্টায় প্রাথমিকভাবে ১,৫৮১ জন শহীদ ও আহত ব্যক্তির একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই তালিকা প্রণয়নের কাজে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি এবং রেড জুলাইসহ অন্যান্য সংস্থা সহায়তা প্রদান করেছে। এছাড়াও, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সহযোগিতাও এই তালিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তারেক রেজা আরও জানান, তালিকার তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি তথ্য যাচাই করে তা চূড়ান্তভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠাবে। এর মাধ্যমে শহীদ ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শহীদদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে সরাসরি ফোন বা সাক্ষাৎ করে তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে এখনও অনেক শহীদ আছেন, যাদের নাম তালিকায় আসেনি। জেলা কমিটিগুলোর মাধ্যমে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যেন প্রতিটি শহীদের তথ্য ভেরিফাই করে সঠিকভাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়।”
সহায়তাকারী সংস্থার ভূমিকা
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য সংস্থার নেতারা বলেন, তথ্য সংগ্রহ এবং যাচাইয়ের এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। তবে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি এবং রেড জুলাই সহ অন্যান্য সংস্থার সহায়তায় এই কাজ অনেকটাই সহজ হয়েছে। তারা বলেন, শহীদ ও আহতদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য সঠিক তথ্য প্রাপ্তি অত্যন্ত জরুরি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও জনতার একটি বিশাল আন্দোলন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে এই আন্দোলন শুরু হয় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এতে ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তবে এই আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতায় অনেক মানুষ আহত এবং শহীদ হন।
চূড়ান্ত তালিকার গুরুত্ব
তালিকার চূড়ান্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই তালিকা নির্ভুলভাবে প্রস্তুত হলে শহীদ ও আহতদের সঠিকভাবে সম্মাননা জানানো যাবে। একইসঙ্গে, শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি মূল ভূমিকা পালন করবে।
উপসংহার
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নাগরিক কমিটি ও স্বাস্থ্য উপ-কমিটি একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, তারা আহত ও শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। যদিও এখনো অনেক নাম অন্তর্ভুক্ত করা বাকি, তবে তারা আশাবাদী যে শিগগিরই সঠিক তথ্য সংকলন করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন
কোটার সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনে সহস্রাধিক নিহত ও চার শতাধিক মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন