ড. মুহাম্মদ ইউনূস, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, বিশ্বজুড়ে তার ক্ষুদ্রঋণ মডেল ও সামাজিক ব্যবসায়িক মডেলের জন্য পরিচিত। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট তারিখে, তাকে স্বাগত জানাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ত্বে এই আয়োজন ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত এবং উচ্ছ্বাসমুখর।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেক্ষাপট
ড. ইউনূস একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ যিনি গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত হন। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ মডেল দরিদ্র নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অসাধারণ অবদান রেখেছে।
ড. ইউনূসের দেশে ফেরা: শিক্ষার্থীদের উদ্দীপনা
শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই ঘোষণার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের ঝড় বয়ে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে, ঢাকার টিএসসি থেকে শিক্ষার্থীরা র্যালি করে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন ড. ইউনূসকে স্বাগত জানাতে।
শিক্ষার্থীদের সংহতি এবং উচ্ছ্বাস
বিমানবন্দরে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক উচ্ছ্বাসের আমেজ দেখা গেছে। তারা নিজেদের মধ্যে সংহতি প্রদর্শন করে ড. ইউনূসের প্রতি সম্মান এবং তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা হাতে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার এবং ফেস্টুন নিয়ে বিমানবন্দরের সামনে জড়ো হন এবং স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন পরিবেশ।
ড. ইউনূসের আগমন এবং অভ্যর্থনা
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বহনকারী বিমানটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তাকে স্বাগত জানাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূস বিমানবন্দরে নামার পর শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ও সংবর্ধনা গ্রহণ করেন। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের উদ্দীপনা ও সাহসিকতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যারা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যারা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।”
রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ড. ইউনূসের ভূমিকা
ড. ইউনূসের দেশে ফেরার পটভূমিতে রয়েছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিশাল পরিবর্তন আনয়ন করে। এর পরপরই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন এবং ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত করেন।
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্ব
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই সরকারে ১৫ জন উপদেষ্টা সদস্য থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে তারা শপথ নেবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকার দেশের স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ড. ইউনূস তার বার্তায় উল্লেখ করেছেন যে, “আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
শিক্ষার্থীদের ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের নেতৃত্ব এবং উদ্যোগ দেশব্যাপী সমর্থন লাভ করেছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের শক্তি, সাহস এবং সংহতি প্রদর্শন করেছেন, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি নতুন দিশা প্রদর্শন করে।
উপসংহার
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেশে ফেরা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তার নিয়োগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে। শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস এবং সংহতি প্রদর্শন প্রমাণ করে যে, দেশের যুব সমাজ পরিবর্তনের পক্ষে এবং তাদের উদ্যোগে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সফল হবে এবং দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশাবাদী।
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ত্যাগ
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংসদ ভবনে হামলা ও লুটপাট