২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ: ইতিহাসের প্রথম ত্রিদেশীয় আয়োজন
২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আসছে এক বিরল আয়োজনের মাধ্যমে। এই প্রথমবারের মতো বৃহৎ পরিসরে একসঙ্গে তিন দেশ—কানাডা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্র—বিশ্বকাপের আসর বসাবে। ১১ জুন ২০২৬ তারিখে মেক্সিকোর বিখ্যাত আজতেকা স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হবে এ মহাযজ্ঞ, এবং ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ফাইনালের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটবে। ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ: ইতিহাসের প্রথম ত্রিদেশীয় আয়োজন
নতুনত্বের আভাস
২০২৬ সালের বিশ্বকাপ বেশ কিছু নতুনত্ব নিয়ে আসছে। এবারের আসরে দল এবং ম্যাচসংখ্যা উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে ৩২ দলের অংশগ্রহণে ৬৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে আসন্ন বিশ্বকাপে ৪৮টি দলের অংশগ্রহণে ১০৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এই পরিবর্তন বিশ্বকাপের উত্তেজনা এবং প্রতিযোগিতা আরো বৃদ্ধি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সময়ের সংকোচন
দল এবং ম্যাচ সংখ্যা বাড়লেও টুর্নামেন্টের সময়ের দৈর্ঘ্য সেভাবে বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে, একদিনে ৬টি ম্যাচও মাঠে গড়াতে পারে। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া দলগুলো ১২টি গ্রুপে বিভক্ত হবে এবং প্রতিটি গ্রুপে চারটি দল থাকবে। গ্রুপের প্রথম দুই দল করে সুপার সিক্সটিনে কোয়ালিফাই করবে।
গ্রুপপর্ব এবং নকআউট রাউন্ড
গ্রুপপর্ব চলবে ১১ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত। এরপর ২৯ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত শেষ ৩২ এর ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। মেক্সিকোর গুয়াদালাহারা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া বাদে বাকি ১৪টি ভেন্যুতে এই রাউন্ডের ম্যাচগুলো হবে। শেষ ১৬ রাউন্ডের খেলা চলবে ৪ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত। কোয়ার্টার ফাইনাল হবে ৯ থেকে ১১ জুলাই, যার ভেন্যু লস অ্যাঞ্জেলস, কানসাস সিটি, মায়ামি এবং বোস্টন। দুটি সেমিফাইনাল হবে ডালাস এবং আটলান্টায় যথাক্রমে ১৪ এবং ১৫ জুলাই। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ১৮ জুলাই মায়ামিতে এবং শিরোপার লড়াই হবে ১৯ জুলাই নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে।
ভেন্যু এবং ম্যাচ সংখ্যা
কানাডার টরেন্টো এবং ভ্যানকুবার মিলে মোট ১৩টি ম্যাচ আয়োজন করবে, যার মধ্যে রয়েছে গ্রুপপর্বের ১০টি ম্যাচ। মেক্সিকোতেও ১৩টি ম্যাচ হবে মেক্সিকো সিটি, গুয়াদালজারা এবং মনেটেরিতে। যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহরে টুর্নামেন্টের বাকি ৭৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ আয়োজনের গৌরব অর্জন করেছে আজতেকা স্টেডিয়াম। ১৯৭০ এবং ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ফাইনালসহ মোট ১৭টি ম্যাচের আয়োজক ছিল এই স্টেডিয়াম। ২০২৬ বিশ্বকাপের উদ্বোধনীসহ মোট পাঁচটি ম্যাচ হবে আজকেতায়। পেলে এবং ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তিদের স্মৃতি বিজড়িত এই স্টেডিয়ামটি নতুন করে ইতিহাস রচনা করতে চলেছে।
নতুন স্টেডিয়াম এবং পুরোনো স্মৃতি
১৯৯৪ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু সেই বিশ্বকাপের কোনো স্টেডিয়ামে এবার আর কোনো ম্যাচ হবে না। ৮২ হাজার ৫০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতার মেটলাইফ স্টেডিয়ামে এই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এই বৃহৎ ভেন্যুতে ফাইনালসহ মোট সাতটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, যা দর্শকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসবে।
২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ হবে এক ঐতিহাসিক আসর। প্রথমবারের মতো তিন দেশের আয়োজনে এবং দলের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি ফুটবল প্রেমীদের জন্য এক নতুন উত্তেজনার অধ্যায় হতে চলেছে। দিশার ফিটনেস রহস্য যেমন তার ভক্তদের জন্য অনুপ্রেরণা, তেমনই আসন্ন বিশ্বকাপের নতুনত্ব ফুটবল প্রেমীদের জন্য হবে এক বিশাল উৎসব।
আরো পড়ুন:
ডেভিড জনসন: স্পিডস্টার থেকে আকস্মিক বিদায়
বাংলাদেশের ভারতের বিপক্ষে সিরিজ: নির্ধারিত দিন-তারিখ ও ভেন্যু