Custom sticker service

Your One-Stop Shop for Personalized Stickers,
Crafted with Love and Delivered Fast! 💌

একদিনে টাঙ্গাইলের পাঁচ জমিদার বাড়ি ভ্রমণ

একদিনে টাঙ্গাইলের পাঁচ জমিদার বাড়ি ভ্রমণ

অনেকদিন ধরে ভাবছি কোথাও ঘুরতে হবে। কোথায় যাব এবং ছুটি নেয়াটা খুব একটা সহজ হয়না মূলত আমরা যারা ব্যাংকের চাকরি করি। হঠাৎ করেই একটা ট্রেনিং এর সুযোগ পেয়ে পরিকল্পনা করে ফেললাম ঢাকার টাঙ্গাইলে যে কয়টি জমিদারবাড়ী আছে সবকটি ঘুরে আসার। প্রথমেই বলে রাখি সাজিয়ে গুজিয়ে তেমন লেখার অভ্যাস নেই। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ। যে জমিদার বাড়ি গুলো ঘুরে দেখেছি সে গুলো হলোঃ

ঢাকার পাশে টাঙ্গাইল জেলায় রয়েছে বেশ কিছু পুরনো জমিদার বাড়ি। ঢাকা থেকে সকালে রওনা হলে একদিনেই টাঙ্গাইলের সব কয়টি জমিদার বাড়ি ঘুরে আসা যায়।

সকাল ৭টায় ঢাকার মধ্যবাড্ডা থেকে তুরাগ বাসে করে সোজা চলে গেলাম আব্দুল্লাহপুর। বস জনি ভাইকে সাথে নিলাম। তারপর আব্দুল্লাহপুর টু টাঙ্গাইল বাসে টিকেট নিয়ে শুরু করলাম দীর্ঘ ৩ ঘন্টার যাত্রা।

১. করটিয়া জমিদার বাড়ি

টাঙ্গাইলের একটু আগে করটিয়া নেমে প্রধান সড়কের পাশ থেকে একটি অটোরিক্সা নিয়ে গেলাম করটিয়া জমিদার বাড়ি। জমিদারবাড়ির প্রধান দরজা পার হওয়ার সাথে সাথে ডাক আসল ভেতর থেকে “আমাকে কিছু খরচা পাতি না দিলে ভেতরে ডুকতে দেয়া হবে না বললাম”। দিলাম ৫০টাকা বাড়ির কেয়ারটেকার আন্টিকে। পুরাতন জমিদারবাড়ীর প্রতিটি দেয়ালে লেগে আছে জমিদারদের শিকার করা হরিণের শিং সহ মাথার খোলস। আর তৎকালীন তাদের রুচিপূর্ণ ভাব নিয়ে তোলা বিভিন্ন ধরণের ছবি।

বাড়ির প্রতিটি আসবাবপত্র পুরাতন কাঠের তৈরী এখনো শক্ত ও মজবুত রয়েছে যদিও কিছু কিছু নষ্ট হওয়ার পথে।শুনেছি এই জমিদারবাড়ী নাকী অভিনেতা নাঈম এর নানার বাড়ী। তারা থাকে ঢাকার বারিধারায়। মাঝে মাঝে আসে আর ২য় তলায় তাদের জন্য বর্তমান যুগের শীতাতপকারী যন্ত্রও রয়েছে। যদিও এই বাড়ীতে এমনিতে বসে থাকলেও প্রাণটা জুড়িয়ে যাওয়ার কথা।

বিশাল জমিদার বাড়ি ২ টি বড় বড় দালান রয়েছে। তার মধ্যে সামনেরটি খুবই সুন্দর এবং মাঝে রয়েছে একটি বিশাল পুকুর যেখানে হলুদ রংয়ের ব্যাঙগুলো এদিকে ওদিকে ছুটোছুটি করছে আমাদের দেখে। হাটু পরিমাণ পানির মধ্যে ব্যাঙগুলো খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে। বর্ষা মৌসুম হওয়াতে আমাদেরও ভাগ্য ভাল যে এখানে এত সুন্দর ব্যাঙ রয়েছে তা দেখতে পেলাম। পরের বাড়ীটিতে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে একটি স্কুল ও কলেজ। সত্যি অসাধারণ পরিবেশ। করটিয়া বাজারের পাশে আরও একটি জমিদারবাড়ী আছে যেটিতে হয়ত ভেতরে ঢুকতে দেয়া হবে না তবে বাইরে থেকে দেখতে পারেন। পাশে একটি সুন্দর মসজিদও রয়েছে।

২. মহেড়া জমিদার বাড়ি

এরপর চলে আসলাম মহেড়া জমিদার বাড়ি। করটিয়া প্রধান সড়ক থেকে বাসে করে নামলাম মহেড়া। সিএনজিতে ২জন শেয়ারে চলে গেলাম মহেড়া জমিদারবাড়ী। মহেড়া জমিদার বাড়ীটি বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহণ করে এখানে স্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে টিকেট এর বিনিময়ে। মহেড়া জমিদার বাড়ীতে মোট ৩টি বড় , ২টি ছোট পূরাতন জমিদারী দালান এবং ১টি বড় পুকুর রয়েছে সামনে। প্রতিটি দালানের সামনে রয়েছে সুন্দর বাগান এবং ভেতরে রয়েছে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার এর আরও একটি নতুন সম্ভবত দালান যেখানে তাদের ডরমেটরী হিসেবে ব্যবহার হয়। (আমি শিওর না)পাশে মসজিদ রয়েছে এখানে দুপুরের নামাজটা পড়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম অন্য একটি জমিদারবাড়ী দেখার জন্য।

৩. পাকুল্লা জমিদার বাড়ি

মহেড়া থেকে বাসে করে নামলাম পাকুল্লা। বেশী দূর যেতে হয়নি পাশেই হেটে পৌছে গেলাম লাল রংয়ের বিশাল সাইডওয়াল দেয়া দুতলা জমিদার বাড়ির সামনে কার্পেট বিছানো মাঠে। সামনে এগোতেই চোখে পড়ল জমিদার বাড়ীর দরজার পাশের রুমে কারা যেন বসে আছে। আগে ফটোসেশনটি করে নিলাম। তারপর গিয়ে পরিচয় হলাম তাদের সাথে। ৭ম জমিদার বসে আছে সামনের অফিস রুমে আর ভেতরে রয়েছে তার পরিবারের সবাই। অন্যরা সবাই থাকেন ঢাকায়। পরিচয় সূত্রে ছবি তুলতে চাইলাম পারলাম না কারণ উনার জমিদারী বসা দেখে আর বলতে ইচ্ছে হয়নি। (খালি গায়ে বসা ছিল)। উনার মাধ্যমে জানতে পারলাম বাজারের পাশেই রয়েছেন দেলদুয়ার জমিদার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষী শাহী জামে মসজিদ। দেখার সুযোগ হলেও কোন ইতিহাস জানতে পারিনি।

৪. দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি

দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি উদ্দেশ্যে এরপর শেয়ারে সিএনজি করে চলে গেলাম দেলদুয়ার। সকাল সকাল খুব বৃষ্টি হওয়ায় সারাটা দিন ঠান্ডা ঠান্ডা দুইজনে ঘুরে বেড়াতে খুব ভাল লাগছিল। দেলদুয়ার পৌছে রিক্সা নিলাম। (এই রিক্সা না নিলে দেখা হতো না) জমিদার বাড়ির রাস্তা দেখেই বুঝা গেল সেই মাপের জমিদার ছিলেন এই বাড়ীর লোকজন। পাশে শতবর্ষী মসজিদ আর সামনে বিশাল পুকুর। নিস্তব্দ এলাকার মধ্যে বিশাল জমিদারবাড়ীর ভেতরটা দেখার জন্য ২টি গেইটেই ঢুঁ মেরে দেখলাম কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই। আমাদের রিক্সা ড্রাইভার এর পরিচিত হওয়ায় উনার অনেক কষ্টের ফলে কেয়ারটেকারকে ম্যানেজ করে ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হলাম। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল সবুজ খড়ে মোড়ানো কার্পেটের বিশাল খোলা উঠান। বিশাল আকৃতির শতবর্ষী গাছগুলো সাক্ষী হয়ে আছে এই বাড়ীর প্রতিটি জমিদারের উত্থান ও পতনের ইতিহাসের।

পাশেই রয়েছে জমিদার বাড়ির নিজস্ব কবরস্থান। এখানে শুয়ে আছে ডজনখানেক এক্স-জমিদার সাথে তাদের জন্মসাল আর মৃত্যুসাল শোভা পাচ্ছে মার্বেল পাথরের ক্ষুদাই করা বোর্ডে। বহুগুণের অলংকারিক বৃক্ষ কাঠবাদামের ফুলের সুগন্ধে যেন এখান থেকে বের হতেই ইচ্ছে করছিল না। বাড়ীর নাম “নর্থ হাউস”। শতবর্ষী এই বাড়ীটির প্রতিটি ইটের দেয়াল পুরোনো হলেও নতুন ভাবে চুন কাম করা হয়েছে লাল আর সাদা রংয়ের মিশ্রনে। দেখতেই ব্রিটিশ আমলের মন্ত্রীর বাড়ীর মতই মনে হয়েছিল। পরে জানতে পারলাম এই বাড়ীর জমিদার ব্রিটিশ আমলের মন্ত্রী ছিলেন। আমার ধারণা তেমন ভুল হয়নি। এখানে আর বেশী সময় না নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম পরের আরেকটি জমিদারবাড়ীর খোঁজে।

৫. নাগরপুর জমিদার বাড়ি

পোড়াবাড়ীতে রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া করে ৩০০/-টাকায় চলে গেলাম নাগরপুর (যদি শেয়ারে যেতে চান তাহলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে সিএনজি করে যেতে পারেন এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০/- খরচ হবে)। রিক্সা নিয়ে জমিদারবাড়ীর সামনে গিয়েই দেখি সবকটি গেইট বন্ধ। জমিদারবাড়ীর সীমানা কতটুকু পর্যন্ত কারও কাছ থেকে জানতে পারলাম না তবে সামনে প্রধান যে ২টি পুরোনো দালান দেখলাম তাতে নাগরপুর মহিলা অনার্স কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। সামনের পুকুর ঘাটে বসে খেচিয়ে ২/৩ টি ফতো নিয়ে নিলাম আর চিন্তা করলাম যদি ভেতরেই না ঢুকতে পারি তাহলে এইগুলো দিয়ে কাজ চালিয়ে দেব। ৫/৬টি জীর্ণশীর্ণ বাড়ী ঘুরে চারপাশ ঢুঁ মেরে কোথাও কোন কিনারা করতে না পেরে সামনের দরজার ফটক দিয়ে মোবাইল এর ক্যামেরা লাগিয়ে প্রধান দালানসহ ২টি দালানের ছবি নিয়ে রাখলাম। পরে জানতে পারলাম এখানে গোপন ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে এবং ভেতরে কেউ নেই তখন। অবশ্য ওইদিন শনিবার হওয়াতে কলেজ ছুটির দিনে কাউকে পাওয়া যায়নি। খোলার দিনে গেলে হয়ত ভেতরে ঢুকাটা সম্ভব হতো। (তবে শিওর না) যা দেখেছি তাতেই সন্তুষ্ট থেকে চলে আসলাম টাঙ্গাইলের ঐতিহাসিক মজাদার খাবার চমচম খাওয়ার জন্য টাঙ্গাইল প্রধান শহরে। তারপর এখান থেকে সোজা ঢাকা।

টাঙ্গাইল জমিদার বাড়ি ভ্রমণ খরচ

আমাদের প্রতিজনের পেছনে যা খরচ হয়েছে তার হিসাব এখানে দেয়া হয়েছে (খাবার ছাড়া)। সবমিলিয়ে ৭৫০/- টাকার ভেতরে। এটুকুতেই আপনারাও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন। একটি দিন বিন্দাস কেটে যাবে ১০০% টাকা ফেরত গ্যারান্টি দিতে পারি।

বিঃ দ্রঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গা নিজেদের মায়ের আঁচলের মতই। যেখানেই যান আপনার মাধ্যমে যাতে কোন ধরণের অপরিস্কার না হয় এটুকু খেয়াল রাখবেন। আপনার খাবারের উচ্ছিষ্ট, পানির বোতল নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে রাখুন।facebook sharing button

whatsapp sharing buttonsharethis sharing button

দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।

আরও পড়ুন..

  • Related Posts

    শাপলা গ্রাম সাতলা: অপরূপ জলাভূমি

    শাপলা গ্রাম সাতলা: বাংলাদেশের অপরূপ জলাভূমি শাপলা গ্রাম সাতলা (Shapla Gram Satla) বরিশাল বিভাগের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামে অবস্থিত একটি বিল, যা শাপলার বিল নামে পরিচিত। এখানে হাজারো লাল শাপলা…

    আহসান মঞ্জিল, পুরান ঢাকা

    আহসান মঞ্জিল: পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান বাংলাদেশের পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত শত বছরের পুরনো একটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে আহসান মঞ্জিল। এটি প্রাচীন ঢাকার নবাবদের…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You Missed

    একদিনে টাঙ্গাইলের পাঁচ জমিদার বাড়ি ভ্রমণ

    একদিনে টাঙ্গাইলের পাঁচ জমিদার বাড়ি ভ্রমণ

    ১ অক্টোবর থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে

    ১ অক্টোবর থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে

    চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত

    চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা: ১৫ জন অভিযুক্ত, ৪০ জন অজ্ঞাত

    সোনার দাম বাড়লো

    সোনার দাম বাড়লো

    জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ

    জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ

    হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লার মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি

    হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লার মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি