গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ঘরোয়া ওষুধের পরামর্শ দিলেন ডাক্তার তাসনিম জারা
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আজকাল প্রায় সবাইকেই ভোগায়। ডাক্তার তাসনিম জারা এই সমস্যার ঘরোয়া সমাধান নিয়ে কিছু কার্যকরী পরামর্শ দিয়েছেন। সঠিক সময়ে এবং সঠিক উপায়ে খাবার গ্রহণ করলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
গ্যাস্ট্রিক কেন হয়?
গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ মূলত পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড জমার কারণে হয়। খাবার হজম করার সময় এই অ্যাসিড তৈরি হয়। যদি কোন কারণে এই অ্যাসিড গলার দিকে উঠে আসে, তখন বুকে জ্বালা অনুভূত হয়।
গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ
গ্যাস্ট্রিকের কয়েকটি প্রধান লক্ষণ হলো:
- ওজন হঠাৎ কমে যাওয়া
- খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া
- বারবার বমি বমি ভাব হওয়া
- পেটে চাপ ব্যথা
- রক্তশূন্যতা
তাসনিম জারা বলেন, যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গ্যাস্ট্রিকের ঘরোয়া সমাধান
১. সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ
তাসনিম জারা নিয়মিত এবং সময়ে খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। ঘুমাতে যাওয়ার তিন-চার ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া উচিত।
২. ছোট ছোট ভাগে খাবার
একসাথে বেশি খাবার না খেয়ে সারাদিনে ছোট ছোট ভাগে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাসনিম।
৩. খাদ্যতালিকা নির্ধারণ
মশলাযুক্ত খাবার সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে কোন খাবার থেকে সমস্যা হচ্ছে তা বুঝে সেই খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
৪. মানসিক চাপ এবং ধূমপান পরিহার
মানসিক চাপ এবং ধূমপান গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
৫. মাথা উঁচু করে ঘুমানো
ঘুমানোর সময়ে মাথা এবং বুক বিছানা থেকে অন্তত ১০ সেন্টিমিটার ওপরে রাখা উচিত। এতে বুকে জ্বালা অনেকটাই কমে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন জরুরি। ডাক্তার তাসনিম জারার পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া সম্ভব। নিয়মিতভাবে এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার প্রকোপ কমে যাবে এবং সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব হবে।
বিস্তারিত নির্দেশনা
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কার্যকরী ঘরোয়া উপায়গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। নিয়মিত এবং পরিমিত খাবার গ্রহণের পাশাপাশি নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা উচিত।
১. খাওয়ার সময়সূচি নির্ধারণ
খাবার খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি নির্ধারণ করা উচিত। বিশেষ করে সকালে এবং রাতে খাওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
২. সুষম খাদ্য গ্রহণ
সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। প্রোটিন, শাকসবজি, এবং সুষম খাবার খাওয়া উচিত। মশলাযুক্ত খাবার থেকে সমস্যা হলে তা খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান
পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
মানসিক চাপ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন করতে পারেন।
ধূমপান এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
ধূমপান এবং অ্যালকোহল গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে। এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
ঘুমের পদ্ধতি
সঠিকভাবে ঘুমানোর পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। ঘুমানোর সময় মাথা এবং বুক উঁচু করে রাখার চেষ্টা করুন। এতে অ্যাসিড রিফ্লাক্স কম হবে।
ঘরোয়া উপাদান
১. আদা
আদা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কার্যকরী। আদা চা পান করতে পারেন।
২. এলাচ
এলাচ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে। খাদ্যে এলাচ ব্যবহার করতে পারেন।
৩. মৌরি
মৌরি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে কার্যকরী। মৌরি চা পান করতে পারেন।
৪. টকদই
টকদই পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রতিদিন এক কাপ টকদই খেতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ঘরোয়া উপায়গুলো অনুসরণ করে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ডাক্তার তাসনিম জারার পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিতভাবে এই পদ্ধতিগুলো মেনে চললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে এবং সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন:
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা